থমকে গেছে মহেশপুরের ইকো পার্কঃসরকারি উদ্যোগে সাড়ে ৩বছরেও দৃশ্যমান হয়নি

আনওয়ারুল ইসলাম,মহেশপুর(ঝিনাইদহ)থেকেঃ ২০১৬ সালের ৩১শে অক্টোবর ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা প্রশাসন থেকে উপজেলার খালিশপুর বাজারের কপোতাক্ষ নদের পাড়ে নীল কুঠি কাছারি বাড়ির জায়গাটি বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান ইকো পার্ক করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। এলাকার কিছু লোকজন নিয়ে ইকো পার্ক হিসেবে ঘোষণা দেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসিল্যান্ড। কিন্তু সাড়ে ৩ বছর পার হলেও দৃশ্যমান হয়নি থমকে গেছে এর কার্যক্রম।

কপোতাক্ষ নদের পাড়ে খালিশপুর গ্রাম। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের নামে বর্তমানে এই গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে হামিদনগর। এই গ্রামে তার নামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি সরকারি কলেজ রয়েছে। কলেজের সাথে স্মৃতি পাঠাগার এবং এর সামনে সমাধি করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠের মায়ের। এখানে প্রায় সরকারের ৩৭ বিঘা জমি রয়েছে। গত সাড়ে ৩বছরে এই ইকো পার্কের উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশাফুর রহমান এটিকে তড়িঘড়ি করে ইকো পার্ক করার ঘোষণা দেওয়ার পর সরকার বা জনপ্রতিনিধিরা কোন কার্যক্রম করেনি। ইকো পার্কের কার্যক্রমটি কাগজে কলমে ফাইল বন্দি হয়ে পড়েছে। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকার জানান, ইকো পার্কের বিস্তারিত প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে এখনও তারা অনুমোদনের কপি পায়নি। গত বছর মহেশপুর ভূমি অফিসের উদ্যোগে ২৫হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন জাতের বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে শোভা বর্ধনের জন্য। এলাকাবাসী মনে করছে পার্কটি আধুনিক মানের নির্মাণ করা হলে পর্যটকদের কাছে দৃষ্টি নন্দন হয়ে উঠত। যার রয়েছে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য।

ঐতিহাসিকদের মতে, ১৮১১ সালে কোটচাঁদপুরের দুতিয়ার কাঠি কুঠির মালিক মিঃ ব্রিজবেন খালিশপুরের নীল কুঠিরটি স্থাপন করেন। সে সময় খালিশপুর থেকে সাঁগরদাড়ি হয়ে কলকাতা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করতো। তৎকালে খালিশপুরের কুঠিটি কাছাড়ি হিসাবে ব্যবহৃত হতো। কলকাতা থেকে অনেক কুঠিয়াল সাহেব নদী পথে মাঝে মাঝে কাছারি বাড়ীতে আসতেন। ১৮০৫ সালে যশোর জেলায় অনেক ইংরেজ নীল ব্যবসায়ীর আগমন ঘটে এবং তারা বিভিন্ন স্থানে নীল কুঠি স্থাপন করেন। একাধিক নীল কুঠি নিয়ন্ত্রিত হতো কনসারন অফিস দ্বারা সে সময় কাঠগড়া কনসারন অফিসের অধীন ছিল খালিশপুর নীল কুঠির। দক্ষিণ মুখি কুঠি ভবনটির দৈর্ঘ্য ১২০ফিট, প্রস্থ ৪০ফিট ও উচ্চতা ৩০ ফিট । দক্ষিন দিকে প্রশস্থ বারান্দা। ১২ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন এটি। দেওয়াল ২০ ইঞ্চি পুরু। নিচের তলার থেকে উপরের তলার কক্ষগুলি আয়তনে বড়। চুন, সুড়খী ও পাকা ইটের তৈরী। ২০০ বছরের পুরতন ভবনটি এখন ধ্বংসের দ্বাার প্রান্তে। গোসল করার পাঁকা সিড়ি নদীর নি¤œ পর্যন্ত নামানো যা এখনও ভগ্নদশা অবস্থায় আছে। ১৯৯৯ সালে কলেজ এবং ২০০৭ সালে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে যাদুঘর স্থাপনের পর খালিশপুরের সুনাম বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু নীলকুঠিয়ালদের অত্যাচার নির্যাতনের মর্মান্তিক কাহিনী এ অঞ্চলের মানুষ এখনও ভুলে যায়নি। কেননা ধ্বংস প্রায় নীল কুঠি তাদের মনে অতীত নিপীড়নের কথা জাগিয়ে তোলে।

জানা যায়, বৃটিশ শাসনামলে খালিশপুরে দুটি পতিতা পল্লী ছিল যার পৃষ্টপোষকতায় ছিল ইংরেজরা। ইংরেজ সাহেবদের মনোরঞ্জনের জন্য বহু পতিতা এখানে বাস করতো। নীল কুঠির সিড়িতে ইংরেজরা ও পতিতারা একই সাথে গোসল করতো। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরও কিছু সংখ্যক পতিতা এখানে ছিল। ১৯৫৪ সালে স্থানীয় লোকজন তা উচ্ছেদ করে দেয়। কতশত করুন কাহিনীর ছাপ এই কুঠির দেওয়ালে লেগে আছে তা আজ কেউ বলতে পারে না।

২০০৭ সালের দিকে কুঠি বাড়িটি নিলাম দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েিেছল। এ সময় স্থানীয় জনতা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা) ও মানবাধিকার সংগঠন আরডিসি মিলে মানববন্ধন করে গণমাধ্যমের সহায়তায় সে সময় নিলাম থেকে রক্ষা করা হয়। মহেশপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার অজিয়ার রহমান তৎকালীন প্রততœতত্ব বিভাগের কাছে কুটি বাড়িটি সংরক্ষন করার জন্য পত্র প্রেরণ করেন। সম্প্রতি প্রততœতত্ব বিভাগ নীল কুঠিরটি সংস্কার করবে বলে জানা গেছে। এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান ইকো পার্ক করার উদ্যোগ গ্রহন করায় এলাকার মানুষ খুবই খুশি হলেও বর্তমানে হতাশায় রয়েছে। এক সময়কার অত্যাচার বেদনার স্থানটি হবে আনন্দ খুশির স্থান। এটিই মানুষ কামনা করে।