ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বাল্যবন্ধু ছিতুয়াকে বুকে টেনে নিলেন, জাত ভুলে

সাভার থেকে খুরশেদ আলম
বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার এনামুর রহমান এমপি। এক জন সরকারের বিশ্বস্ত মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বাস তো একজন মানুষ।

শনিবার রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে বাল্যকালের বন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক পোস্ট দেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা-১৯ আসনের (সাভার) সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান এমপি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের বাল্যবন্ধু পেশায় তিনি একজন সুইপার। সম্প্রতি ছিতুয়া নামের তার সেই স্কুল জীবনের বন্ধু রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাকরি থেকে অবসরে গেছেন । তবে তার বন্ধু ছিতুয়ার স্ত্রী গীতা রানী এখনো সেই পেশায়। ছিতুয়ার মা চানিয়া রানীও এই পেশায় ছিলেন। রংপুরের পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে গিয়ে মন্ত্রীর দেখা হয় বাল্যবন্ধু ছিতুয়ার সাথে।

নিচু জাতের ভেবে ছিতুয়া নিজেকে আড়াল করতে চাইলেও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী তাকে ভোলেনি। সবার সামনেই বন্ধুর প্রতি ভালোবাসায় বুকে টেনে নিয়েছেন । সেই ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে পরম বন্ধুর প্রতি দেখিয়েছেন শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা। প্রকাশ করেছেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের এক চিত্র।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তরের সামনে থেকে তোলা বন্ধুকে জড়িয়ে ধরা একটি ছবি পোস্ট করেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী তার ফেসবুকে লেখেন, ‘পতাকাবাহী গাড়ি। পুলিশ প্রটোকল। বাড়তি লোকজনের ভিড়। এসব দেখে কিছুটা হতভম্ব ছিতুয়া। আমাদের সেই বন্ধুত্বের আবেগ আর আমার দুরন্তপনার দিনগুলো তখন অতীতের স্মৃতির ঝাঁপি খুলে জ্বলজ্বলে তারা হয়ে উপস্থিত আমার চোখের সামনে।

জনগণের সামনেই ডাকতে শুরু করলেন, এই ছিতুয়া “বলে ডাকতেই ফিরে তাকালো সে। পড়ন্ত বয়সেও যেন সেই হারানো যৌবনের চকচকে চোখে মৃদু হাসিতে তাকালো আমার দিকে। দৃষ্টি বিনিময় হতেই বন্ধুকে বুকে টেনে নিয়ে বুক ফুলিয়ে গর্বের সাথে বললাম, এই ছিতুয়াই আমার স্কুলের বন্ধু। ছিতুয়ার তখন ছল ছলে চোখ। আমারও গোপন অশ্রুবিন্দু গুলো তখন স্মৃতির মণিমুক্তা হয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে দুই নয়ন।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী (সুইপার) থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়েছে ছিতুয়া। ছিতুয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে ধারাবাহিক পেশাগত সম্পর্ক ধরে রেখেছে বৌদি গীতা রানী। সেও এখন সুইপার পদে কর্মরত।

তো আসছি ছিতুয়ার প্রসঙ্গে। আমার বাবা মরহুম আক্তারুজ্জামান খান ছিলেন এই অফিসেরই উচ্চ মান সরকারি ( ইউডি এ্যাসিষ্টেন্ট)। আর ছিতুয়ার মা (আমাদের প্রিয় মাসি মা) চানিয়া রানী ছিলেন সুইপার।

তখন ছিলো স্বর্ণালীযুগ। আমরা যে মূল্যবোধে বেড়ে উঠছিলাম,সেখানে জাতপাতের কোন বালাই ছিল না।

আরো অন্যান্য বন্ধুদের মতো ছিতুয়া-ও ছিলো আমার দুরন্ত শৈশব আর কৈশোর অসাধারণ এক বন্ধু। রংপুরের রবার্টসনগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই ছিলো ছিতুযা। তারপর পড়াশোনায় সে ইস্তফা দিলেও আমাদের বন্ধুত্বে ভাটা পড়েনি কখনো।
আহারে জীবন। আমার সোনালী অতীত। সোনালী কৈশোরের কত শত স্মৃতি মাখা এই রংপুর।
আজ ছিতুয়া ঝাপসা করে দিচ্ছে আমার চোখদুটো।
ছিতুয়া আর আমার দূরন্তপনায় রীতিমতো অস্থির থাকতো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলোনি। আমি দুঃসাহসী “গাছো” ছিলাম। যে কোন গাছে কাঠবিড়ালের মতো তরতর উঠে পড়তে আমার আর ছিতুয়ার ছিলো জুড়ি মেলা ভার। তো কলোনির আঙিনায় সারি সারি নারিকেল গাছের নারকেল পরিপক্ক হবার আগেই তা আমাদের কারনে সাবাড় হয়ে যেতো। তেমনি আম কাঁঠাল-ও।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে কৈশোরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলো একদিকে যেমন আনন্দের অন্যদিকে অনেক কষ্টের।

সেই আনন্দ আর কষ্টের মিশেলে ভিন্ন‌ এক অনুভূতি আজ উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছে আমার বন্ধু ছিতুয়াকে।

সরকারী চাকরী কনটিনিউ করলে বেশ কয়েক বছর আগে আমার নিজেরো অবসর নিতে হতো। আমার বন্ধুদের অনেকেই দেশবরেণ্য চিকিৎসক, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবসহ আরো কত কি!
ছিতুয়া অবশ্যই তাদের তুলনায় কম কিছু নয়।
বন্ধু মানে আস্থা, নির্ভরতা। বন্ধু মানে ভালোবাসা, যেখানে থাকে না কোনো স্বার্থ।
গাড়ির পতাকা,প্রটোকল,পদ-পদবী,সামাজিক অবস্থান এগুলো সব কিছুই সাময়িক। কিন্তু বন্ধুত্বের বন্ধন চিরদিনের।

ছিতুয়া বন্ধু আমার। তোর জন্য ভালোবাসা।’