তোপের মুখে ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এখন বিএনপির তৃণমূল মানছেই না। বরং তাকে দালাল, রাজাকার এবং সরকারের এজেন্ট হিসেবেই মনে করছেন। যতই বিএনপি কর্মসূচিতে যাচ্ছে, ততই ফখরুলকে নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে প্রশ্ন হচ্ছে। এর ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার শঙ্কা করছেন বিএনপি নেতারা। গতকাল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তোপের মুখে পড়েছিলেন আবারও। বিএনপির বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে আয়োজিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম যখন বক্তৃতা দিতে উঠেন, তখন তৃণমূলের কর্মীরা চিৎকার করে ওঠেন ‘কর্মসূচি চাই, কর্মসূচি চাই’ এবং তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষেপে যান। ক্ষেপে গিয়ে তিনি ওই কর্মীকে বেয়াদব বলেন এবং ‘হু ইজ দিস বয়’ বলে চিৎকার করেন। এ সময় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে নানারকম শ্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে শান্ত করেন দলের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা। কিন্তু এটি এখন নিত্যকার ঘটনা ঘটেছে।

ওই অনুষ্ঠানের পরে বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দালাল এবং তিনি যতদিন দলের মহাসচিব থাকবেন ততদিন খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তিনি আন্দোলনের নাটক করছেন। এই ধরণের আন্দোলন করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিও হবে না, সরকারও তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেবে না। এরকম একটি পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্বন্ধে অনেক খিস্তিও শোনা গেল ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সভায়। নেতাকর্মীরা যে যে ভাষায় পারছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গালিগালাজ করছে। একজন তৃণমূলের নেতা বলছেন যে, এখন আর আমাদের বসে থাকার সময় নাই, আন্দোলন করতে হবে। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকার ইশারায় আন্দোলন করেন, সরকারের ইশারায় থামেন। তিনি সাজানো নাটক করছেন। আমরা বারবার বলছি যে বড় ধরনের কর্মসূচি দিতে কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিচ্ছে না। অন্য একজন তৃণমূলের নেতা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে থেকেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের দালালে পরিণত হয়েছেন এবং সরকারের এজেন্ট হিসেবেই তিনি কাজ করছেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান, তখন তার চিকিৎসার খরচ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কিছুই করছেন না।

যদিও বিএনপির একটি অংশ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবস্থানকে সঠিক মনে করছেন কিন্তু ক্রমশ্য বিএনপির নেতারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এখন যোগ্য মহাসচিব হিসেবে মনে করতে রাজি নন। তারা মনে করছেন, এই মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের কর্মসূচি দেয়া উচিত, এমন কর্মসূচি দেয়া উচিত যে কর্মসূচিতে সরকার বাধ্য হবে বা কিছুটা হলেও চাপের মুখে পড়বে। কিন্তু এ ধরনের সমাবেশ, মানববন্ধন জাতীয় কর্মসূচি করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বা তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার দাবি আদায় করা যাবে না। বিএনপির তৃণমূলের একজন নেতা বলছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যদি দালালিই করবেন তাহলে তিনি দালালি করে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। আন্দোলনের নাটক দেখানোর দরকার কি। তিনি তো গ্রেপ্তার হন না, গ্রেপ্তার হই আমরা। গত কিছুদিন ধরে বিএনপি যে সভা-সমাবেশ করছে এরপর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের পুরনো মামলাগুলো আবার নতুন করে চাঙ্গা হচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন। এর ফলে কর্মীরা আবার ঘর বাড়িতে থাকতে পারছেন না, তাদের জন্য পরিস্থিতি ক্রমশ বৈরী হয়ে উঠছে। এরকম একটি অবস্থায় বিএনপির তৃণমূলের নেতারা বড় ধরনের কর্মসূচি এবং চূড়ান্ত কর্মসূচি চান। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন যে, চূড়ান্ত কর্মসূচি দেয়ার মত পরিস্থিতি এখনও হয়নি। যার ফলে তিনি বারবার তোপের মুখে পড়েছেন।