তৃণমূলের কোন্দল নির্বাচনের আগে আ. লীগের ক্ষতি ডেকে আনছে না তো?

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি দুই বছরেরও কম সময়। আর এই নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-কলহ যেন ততই বেড়ে চলেছে। নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ, পাওয়া-না পাওয়ার বেদনা থেকে ক্ষোভ, অনুপ্রবেশ নিয়ে মতবিরোধ, চাপা ক্ষোভ বিস্ফোরিত হচ্ছে দলের মধ্যে। তৃণমূলে দলীয় কোন্দল, এমপি-মন্ত্রীদের মধ্যেকার বিরোধ যেন কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলের এই কোন্দল জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ক্ষতি ডেকে আনছে না তো?

গত দুই বারের তুলনায় তৃতীয় মেয়াদে সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ কেমন যেন একটু এলোমেলো হয়ে পড়েছে। দলটিতে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে এবং আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এখন যেন অন্য কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বরং আওয়ামী লীগ নিজেই। একদিকে, দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের খবর কান পাতলেই শোনা যায়। প্রায় অধিকাংশ জেলায় আওয়ামী লীগ একে অপরের সঙ্গে লড়াই করছে, কুৎসিতভাবে আক্রমণ করছে। অনেক জায়গায় এই কোন্দল হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী এবং কোন্দলের কারণেই ধাপে ধাপে সারাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বহু আওয়ামী লীগের কর্মীকে নিহত হতে হয়েছে। এর পাশাপাশি সহযোগী সংগঠন যুবলীগ-ছাত্রলীগেও বাড়ছে কোন্দল। অন্যদিকে, দুই বছরেরও কম সময়ে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। হাতে খুবই কম সময়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং মন্ত্রী-সাংসদদের সঙ্গে স্থানীয় সংগঠনের নেতাদের দূরত্ব কমানো না গেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের পরীক্ষায় ফেলতে পারে আওয়ামী লীগকে।

তৃণমূল আওয়ামী লীগে কোথাও কোথাও বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য বা তাদের পরিবারের সদস্য, আবার কোথাও কোথাও জেলা-উপজেলা নেতারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লড়াইয়ে নিজেদের ধরে রাখতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি শুরু করেছে। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ইউপি নির্বাচনে অধিকাংশ জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীত প্রার্থীও আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। আওয়ামী লীগের শত্রু যে এখন আওয়ামী লীগ হয়ে যাচ্ছে, তার সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর দলের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেরই বহিঃপ্রকাশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। শুধু নোয়াখালী নয়, একই ঘটনা অন্যান্য জায়গায়ও ঘটে চলেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে শামীম ওসমানের বিরোধ দেশের সবারই জানা। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া মেয়র নির্বাচনেও তাদের বিরোধিতা একাধিকবার প্রকাশ্যে এসেছে। চাঁদপুরের একজন এমপি একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক এবং আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। এছাড়াও পিরোজপুরে গতবার মনোনয়ন না পাওয়া এক এমপি বর্তমান একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসিত আক্রমণ করছেন। একই অবস্থা চলছে কুমিল্লা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, নাটোরেও। মূল দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অঙ্গসহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোতেও কোন্দল তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতেও বিভিন্ন জেলায় ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছরের মধ্যেই তৃণমূল পর্যায় থেকে দল গোছানো, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে আওয়ামী লীগকে। এর পাশাপাশি দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। যেসব জায়গায় নেতাকর্মীর মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে, দ্বিমত, দ্বিধা-বিভক্তি আছে সেগুলো মিটিয়ে ফেলতে হবে। মত পার্থক্য, বিরোধ মিটিয়ে দলীয় শৃঙ্খলাকে আরও সুসংহত করতে হবে। করোনার কারণে সাংগঠনিক কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যেসব জায়গায় কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সেসব জায়গায় সম্মেলনগুলো জাতীয় সম্মেলনের আগেই শেষ করতে হবে। সরকারের ধারাবাহিকতা যাতে থাকে সে জন্য এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করা এবং মানুষের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করে নির্বাচনে বিজয়কে নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।