তুরস্কের সাথে আত্মীয়তা ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

এই আমার দেশঃ

তুরস্ক এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। তুরস্কের প্রায় পুরোটাই এশীয় অংশে, পর্বতময় আনাতোলিয়া (তুর্কি : আন্তালিয়া) বা এশিয়া মাইনর উপদ্বীপে অবস্থিত। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা আনাতোলিয়াতেই অবস্থিত। তুরস্কের বাকি অংশের নাম পূর্ব বা তুর্কীয় থ্রাস এবং এটি ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায়। এই অঞ্চলটি উর্বর উঁচু-নিচু টিলাপাহাড় নিয়ে গঠিত। এখানে তুরস্কের ঐতিহাসিক ও বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুল রয়েছে। তুরস্ক মোটামুটি চতুর্ভুজাকৃতির। এর পশ্চিমে এজীয় সাগর ও গ্রিস; উত্তর-পূর্বে জর্জিয়া, আর্মেনিয়া ও স্বায়ত্তশাসিত আজারবাইজানি প্রজাতন্ত্র নাখচিভান; পূর্বে ইরান; দক্ষিণে ইরাক, সিরিয়া ও ভূমধ্যসাগর। তুরস্কের রয়েছে বিস্তৃত উপকূল, যা দেশটির সীমান্তের তিন-চতুর্থাংশ গঠন করেছে। সামরিক কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জলপথ এশীয় ও ইউরোপীয় তুরস্ককে পৃথক করেছে মারমারা সাগর এবং বসফরাস প্রণালী ও দার্দানেলিস প্রণালীর মাধ্যমে। এ তিনটি জলপথ একত্রে কৃষ্ণসাগর থেকে এজিয়ান সাগরে যাওয়ার একমাত্র পথ তৈরি করেছে। তুরস্কের জনসংখ্যা প্রায় সাত কোটি ১৫ লাখ; আয়তন তিন লাখ দুই হাজার ৪৫৫ বর্গমাইল বা সাত লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৬ বর্গকিলোমিটার। অর্থাৎ, বাংলাদেশের চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি বড় তুরস্ক। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে তুরস্কের চেয়ে বড় প্রতিরক্ষা শক্তি। তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিভাগে মোট ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫০ জন সামরিক সদস্য রয়েছে। ন্যাটোভুক্ত যে পাঁচটি দেশ যৌথ পরমাণু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তুরস্ক তার অন্যতম সদস্য। বাকি দেশগুলো হলো- বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস। প্রতিরক্ষা বিভাগকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে তুরস্ক ১৬ হাজার কোটি ডলারের কর্মসূচি গ্রহণ করে। তুরস্ক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তুরস্ক পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়। ১৯৭৬ সালে প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তুরস্ক সফর করেন। ওই বছরই ঢাকায় তুরস্কের দূতাবাস স্থাপিত হয় এবং ১৯৮১ সালে আঙ্কারায় বাংলাদেশের দূতাবাস খোলা হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা তুরস্ক সফর করেন। বলা বাহুল্য, তুরস্ক ছিল উসমানীয় সাম্র্রাজ্যের কেন্দ্রভূমি। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত উসমানীয় বা অটোমান খিলাফত টিকে ছিল।

২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে তুরস্কের দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং সে বছরই এরদোগানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নেয়ার কারণে দেশটির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে। সেই সূত্রে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত সাভাসগলু এ বছরের জানুয়ারি মাসে দু’দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। ঢাকা সফরের সময়, তিনি নবনির্মিত তুর্কি দূতাবাস ভবন উদ্বোধন করেন এবং দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এশিয়া নিয়ে নতুন উদ্যোগে বাংলাদেশ তার প্রাণবন্ত অর্থনীতি এবং তরুণ জনসংখ্যা নিয়ে তুরস্কের অন্যতম প্রধান অংশীদার।’ সাভাসগলু বাংলাদেশের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপনে আঙ্কারার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, আঙ্কারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদার করার জন্য যা যা দরকার তাই করবে। (আরব নিউজ, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২)

তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। দ্বিপক্ষীয় এ সম্পর্ক যেমন বাণিজ্যিক, সামরিক ও কৌশলগত- তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এক সময় তুরস্ককে দূরের দেশ বলে আখ্যায়িত করা হলেও বর্তমান পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতির আলোকে কৌশলগত প্রয়োজনে বাংলাদেশ ও তুরস্কের কাছাকাছি আসার বিকল্প নেই। উভয় দেশই মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিশ্বাসগত ও সাংস্কৃতিক বন্ধনে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আবদ্ধ। সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি এক বিশাল উপাদান। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থের নিরিখে তাই দু’দেশের আর্থনীতিক, বাণিজ্যিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের চাহিদা এখন ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছে।

পারস্পরিক স্বার্থের দিকে তাকালে, প্রথমে তুরস্কের প্রসঙ্গে আলোচনা করা সমীচীন হবে। কারণ, তুরস্ক মুসলিম দেশ হলেও ইউরোপের; আবার সে ন্যাটোর সদস্য। সামরিক শিল্পে তুরস্ক এখন বিশ্বব্যাপী আলোচিত নাম। ভারতের মনিপাল সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক ড. ইয়াথার্থ কচিয়ার বলেন, ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) অধীনে তুরস্ক ২০০০ সালের গোড়ার দিকে গ্লোবাল সাউথে তার কৌশলগত স্বার্থ অনুসরণ করতে শুরু করে। পরে ২০১৯ সালে নেয়া ‘এশিয়া অ্যানিউ’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশটি শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমন্বয়ের জন্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়। অধ্যাপক কচিয়ার বলেন, বিশ্বব্যাপী কাঠামোগত পরিবর্তন ও একেপির পররাষ্ট্রনীতির পেছনকার আদর্শিক অবস্থানই এশিয়ায় আঙ্কারার নতুন এই সক্রিয়তার কারণ। এক ইমেল সাক্ষাৎকারে কচিয়ার বলেন, ‘পশ্চিমের সাথে সম্পর্কে অব্যাহত ফাটল ও মুসলিম বিশ্বে প্রাধান্য পাওয়ার জন্য চলমান লড়াই তুরস্ককে তার পাশ্চাত্যের চিরায়ত মিত্র এবং প্রতিবেশী মুসলিমপ্রধান দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।’ কচিয়ারের ভাষ্য, প্রেসিডেন্ট এরদোগান ২০২৩ সালের মধ্যে অস্ত্র বিক্রি ২৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের ভিত্তি সম্প্রসারিত করতে চান। বাংলাদেশ হতে পারে তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার।

ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক অ্যালান মিখাইলের বক্তব্য, তুরস্ক এখন অটোমান সাম্রাজ্যের আধুনিক সংস্করণ হিসেবে আবির্ভূত হতে চাচ্ছে। এক ইমেল সাক্ষাৎকারে এ অধ্যাপক বলেন, ‘যেখানে প্রত্যেক আধুনিক তুর্কি শাসক অটোমান সাম্র্রাজ্য ও ইসলামের উত্তরাধিকার থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছেন আরো বেশি পশ্চিমা, ধর্মনিরপেক্ষ ও আধুনিক চেহারা তুলে ধরার জন্য, সেখানে এরদোগানই প্রথম ব্যক্তি যিনি অটোমান সাম্র্রাজ্যের অতীত ও ইসলামী ঐতিহ্যকে সক্রিয়ভাবে তুলে ধরেছেন।’ (ডেইলি স্টার অনলাইন বাংলা সংস্করণ, শনিবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১, ঢাকা)

পক্ষান্তরে, বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে বলতে হয় : শিক্ষা, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তুরস্কে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, তুরস্কের সাথে সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তিনটি উদ্দেশ্য আছে। এগুলো হচ্ছে- কূটনৈতিক শক্তি বাড়ানো, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অস্ত্রের উৎসে বৈচিত্র্য আনা। সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘তুরস্ক সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী। যার একটি স্বাধীন ও জোরালো কণ্ঠ আছে। একই সাথে একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে তুরস্কের ন্যাটো সদস্যপদ আছে।’ শমসের মবিনের অভিমত, রোহিঙ্গা সঙ্কটের মতো গুরুতর কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চলার বাংলাদেশের জন্য মিত্র দরকার। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরামের মতো তুরস্ক সেই মিত্রতা প্রমাণ করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও উত্তর কোরিয়া থেকে প্রধান প্রধান সামরিক সরঞ্জাম কিনে থাকে। আঙ্কারার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ‘তুরস্ক এখন মানসম্মত অস্ত্র তৈরি করছে। যা খুব ব্যয়বহুল নয় এবং কোনো শর্ত ছাড়াই পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের জন্য এটাই দরকার। আর বাংলাদেশ এখান থেকে যন্ত্রপাতি তৈরির প্রযুক্তিও পেতে পারে।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শাহেদুল আনাম খান বলেন, ‘তুরস্ক থেকে অ্যান্টিশিপ মিসাইল ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কেনার অর্থ হচ্ছে এখান থেকে আরো প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার বিকল্প আছে।’ শাহেদুল আনামের বক্তব্য, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা কেবল একবারের বিষয় নয়। এর জন্য প্রশিক্ষণ ও আনুষঙ্গিক খুচরা যন্ত্রপাতির দরকার হয়। তিনি বলেন, ‘সঙ্কটের সময়ে অস্ত্র সরবরাহের জন্য আপনি কেবল একটি উৎসের ওপর নির্ভর করতে পারেন না। আপনার যদি আরো বিকল্প থাকে, তাহলে আপনার স্বাধীনতাও বেশি থাকবে।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শাখাওয়াত হোসেনের অভিমত : বাংলাদেশের জন্য আপাতত কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই। কিন্তু যেহেতু অর্থনীতি বড় হয়েছে এবং বিশাল সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দরকার আছে, সেহেতু দেশের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন দরকার। এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, এ ছাড়া আমরা জাতিসঙ্ঘের মিশনগুলোতে সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশ। এ কারণেও আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দরকার।’ এ ছাড়া দেশের অর্থনীতির জন্যও ঢাকার সাথে আঙ্কারার সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। বিইআই প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবিরের মতে, বাংলাদেশ যেহেতু শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে, সেহেতু এখানে আরো বেশি বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ দরকার। তিনি বলেন, ইউরোপের উচ্চ-মধ্যম আয়ের একটি দেশ তুরস্ক বাংলাদেশের জন্য একটা বড় বাজার হতে পারে। দু’টি দেশের যৌথ উদ্যোগও থাকতে পারে। যেমন- টেক্সটাইল খাত। কারণ এ খাতের মতো আরো কিছু ক্ষেত্রে দু’পক্ষেরই বিশেষত্ব আছে।
বাংলাদেশ-তুরস্ক সামরিক সম্পর্ক এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাস্তবতা বিবেচনায় দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক যথেষ্ট বেড়েছে। ২০১৩ সালে তুরস্ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অটোকার কোবরা হালকা সাঁজোয়া যান সরবরাহ করে। ২০১৫ সালে তুরস্ক বাংলাদেশকে সরকার পর্যায়ে গাইডেড মিসাইলবাহী ফ্রিগেট কেনার প্রস্তাব দেয়। ২০১৮ সালে তুরস্কের ফার্ম ডেলটা ডিফেন্সকে এক বিলিয়ন ডলারের ৬৮০টি হালকা সাঁজোয়া যান তৈরির কাজ দেয়া হয়। ২০১৯ সালের মার্চে মাঝারি পাল্লার এক রেজিমেন্ট গাইডেড মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সরবরাহের দায়িত্ব পায় তুরস্ক। বাংলাদেশের নৌবাহিনী তুরস্কের নৌবাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে যারা বাংলাদেশের সবচেয়ে চৌকস নৌ ইউনিট সোয়াদকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের তিন হাজারের বেশি সামরিক কর্মকর্তা এ পর্যন্ত তুরস্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হলো, দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র দেশ বাংলাদেশের কাছে তুরস্কের আত্মীয়তা কেনই বা এত প্রয়োজনীয়? বলতে হয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক এবং কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ এখন ফেলনা নয়। আকারে ক্ষুদ্র হলেও অন্যান্য বৃহৎশক্তির কাছে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়। দক্ষিণ এশিয়াকে কেন্দ্র করে চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা, ভারত-মিয়ানমারের আঞ্চলিক রাজনীতি ও প্রভাব বিস্তারের জটিল সমীকরণ বাংলাদেশকে করে তুলেছে অনেক কিছুর লক্ষ্যবস্তু। এমন পরিস্থিতিতে যেমন খেলতে জানতে হয় তেমনি খেলাতেও জানতে হয়। নচেৎ, বৃহৎশক্তির টানাপড়েনে আহত হতে বাধ্য। তাছাড়া ভারত ও মিয়ানমারের মতো বৈরী প্রতিবেশীর মাঝখানে থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। এসব পরিস্থিতি যথার্থ অর্থে মোকাবেলা করতে তুরস্কের মতো শক্তির সাথে সম্পর্ক নিঃসন্দেহে সুদূরপ্রসারী ফল দেবে। দক্ষিণ এশিয়ার যে জায়গায় আমাদের বসবাস, সেখানকার ভূ-রাজনীতিদৃষ্টে বলতে হয়, শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অর্জন ছাড়া একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে টিকে থাকা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হবে। আজকের ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে আমাদের সে শিক্ষাই গ্রহণ করা উচিত। বলতে দ্বিধা নেই, রোহিঙ্গা-ইস্যুতে চীন-ভারত আমাদের কোনো সাহায্য করেনি। অথচ দূরের তুরস্ক আন্তর্জাতিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণে প্রচুর সাহায্য জুুগিয়েছে। বিষয়টি কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। বিভিন্ন বৈরী পরিস্থিতিতে একটি শক্তিশালী মুসলিম দেশ ও ন্যাটো-সদস্য হিসেবে তুরস্ক আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। সব কিছু মাথায় রেখে বিবেচনা করলে বুঝতে হবে, তুরস্কের সাথে উত্তরোত্তর সম্পর্কের উন্নয়ন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে অপরিহার্য।