তিস্তার পানি বেড়ে বিপদ সীমার ২২ সেঃ মিঃ উপরে ভাঙ্গনে দিশেহারা মানুষ

মোস্তাফিজুর রহমান লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢল এবং ভারতের গজলডোবার সব কয়টি গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তা ব্যারাজে নদীর পানি বিকাল থেকে আবারও ক্রমেই বাড়ছে ।

ফলে তিস্তা ও ধরলা নদীর অববাহিকার চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে টানা ৭দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে তিস্তা ধরলা অববাহিকার ৬৩ চরে বন্যা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি এবং কমার ফলে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙ্গন।

বৃহস্পতিবার(১৯ আগাস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় লালমনিরহাটের দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি ৫২ দশমিক ৮২ অথ্যাৎ পানি বিপদ সীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারেজ রক্ষায় ব্যারেজের ৪৪ টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।

 

এতে করে জেলার চরাঞ্চলের ১৭টি গ্রাম ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায় কয়েক হাজার পরিবার প্লাবিত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম সানিয়াযান,গড্ডিমারি,সির্ন্দুনা, ডাউয়াবাড়ি,ভোটমারি, মহিষখোচা, গোকুন্ডা, রাজপুর , কুলাঘাট, মোগলহাট এলাকা কয়েক’শ পরিবার সব থেকে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুনা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, গত ১৩ আগস্ট শুক্রবার থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার পর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমার ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়েছে। গত ১০ দিন ২নং ওয়ার্ড চিলমারী পাড়ায় দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পরিবার গুলো সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছে।আমন ধানের ক্ষেতসহ রাস্তাঘাট তলিয়ে রয়েছে।

এছাড়া বসতবাড়িগুলো হাঁটুসমান পানিতে প্লাবিত হয়ে রয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষজন চুলায় রান্না করে খেতে পারছে না। শুকনা খাবার চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুটের ওপর নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে তাদের।

সিন্দুর্না ইউপির ০২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রমজান আলী বলে, নদী ভাঙ্গন কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো শুধুমাত্র ১০ কেজি চাউল ছাড়া সরকারি সাহায্য কিছুই পায়নি।

এদিকে বৃহস্পতিবারও উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে ধরলার পানিও ।

গত ৫ দিন থেকে পানি ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে আসছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নিম্ন অঞ্চলে পানব ঢুকে বন্যা দেখা দিয়েছে।

এদিকে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানিয়েছেন , গত ২৪ ঘন্টায় তিস্তা ধরলায় ৩১ টি ঘরবাড়ী বিলিন হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে।

তিস্তা ব্যারাজ’র পানি বিজ্ঞান শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইলিয়াস আলী জানান, ভারত থেকে প্রচন্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আরও কী পরিমাণ পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না।

এবিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল আমিন জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবপ্রকার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রয়োজন হলে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।