তিন মাসে যৌন নিপীড়নের শিকার সাড়ে ২৩ হাজার শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সময়েও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে শিশু নির্যাতনের ঘটনা। গত ৩ মাসের মধ্যেই সাড়ে ২৩ হাজার শিশুকে যৌন-নিপীড়নের তথ্য-প্রমাণ সিআইডিকে দিয়েছেন মার্কিন সংস্থা ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেন (এনসিএমইসি)। প্রাপ্ত তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে সিআইডি এরইমধ্যে একশ ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই ঘটনার অভিযুক্তরা।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেন (এনসিএমইসি) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। তারা শিশু যৌন নির্যাতন বন্ধ, শিশু পর্নোগ্রাফি নির্মূল করারা পাশাপাশি শিশুদের অধিকারসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধন করা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট) তাদের নেটওয়ার্কে শিশুদের যৌনকাজে ব্যবহার, যৌন নিপীড়নসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এনসিএমইসিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জানায়।২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে এনসিএমইসির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিআইডি এবং সেখান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর থেকেই অভিযান চালাচ্ছেন তদন্ত সংস্থাটি।

শিশু যৌন-নিপীড়ন, এর ভিডিও ধারণ, ছড়ানো বা সংরক্ষণ করলেই বিশেষ প্রযুক্তিতে তথ্য-প্রমাণ চলে যায় সংস্থাটির কাছে এবং সেই তথ্য-প্রমাণ তারা পাঠায় সিআইডির কাছে এমনটাই জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।

সংগৃহীত ছবি

১১ বছরের এক কন্যাশিশু গত বছরের আগস্ট মাসে রাজধানীর তুরাগে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।বেড়াতে এলে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে নিপীড়ন করেন ফুফা, আর সে দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন ফুফু এবং সেই ভিডিও গুগলের মাধ্যমে যায় যুক্তরাষ্ট্রের এনসিএমইসির কাছে। তারা সেটি পাঠায় সিআইডির কাছে। এরপরে ২০২০ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় সেই দম্পতিকে।

এছাড়াও ২০১৯ সালে বরিশালে এক ছেলে শিশুকে যৌন নিপীড়ন করে সে ভিডিও নিজের ফোনেই রেখে দেন এক তরুণ এবং একই ভাবে প্রায় দেড় বছর পর গ্রেপ্তার হয় ওই অভিযুক্ত।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, গত তিন মাসে সাড়ে ২৩ হাজার নিপীড়নের তথ্য সিআইডিকে দিয়েছেন সংস্থাটি। যেগুলোর মধ্যে বর্তমানে একশত ঘটনার তদন্ত চলছে।

দেশের অপরাধ বিশ্লেষকরা সিআইডির সাড়ে ২৩ হাজার কনটেন্টের মধ্যে মাত্র দুইটির সুরাহা করতে পারাকে যথেষ্ট মনে করছেন না। এসব ঘটনা তদন্তে প্রযুক্তি সক্ষমতা থাকা পর্যাপ্ত লোকবল নিয়ে আলাদা ইউনিট গঠন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন।এমনকি অনেক পরিবার জেনেও যৌন নিপীড়নের ঘটনা আড়াল করেন। যার ফলে এমন ঘটনা বন্ধে তাদের আরও সতর্ক থাকতে বলছেন বিশ্লেষকেরা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর সম্প্রতি এক প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০ বলবৎ থাকার পরও এসব আইনে দায়ের হওয়া মামলায় খুব কমই দোষীদের সাজা হয়।

সরকারি ৯ টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের একটির হিসেবে জানা যায় যে, প্রায় ১১ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে মাত্র ১৬০টি ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সম্ভব হয়েছে। চূড়ান্ত বিচারে মাত্র ১ শতাংশ ভুক্তভোগীরা নির্যাতনের ন্যায়বিচার পেয়েছেন। অর্থাৎ ৯৯ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়নি। যা আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে খুবই উদ্বেগজনক একটি চিত্র।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, গেল বছর (২০২০ সাল) এর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১১ মাসে ২০ হাজার ৭১৩ জন নারী ও শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

এনসিএমইসির তথ্যানুযায়ী জানা যায়, শিশুদের দিয়ে যৌনদৃশ্যে কাজ করানো, তাদের যৌন নিপীড়নের ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং তা আদান-প্রদানের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে ২০১৯ সালে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি আদান-প্রদান হয়েছে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪২ টি।