তারেক ফিরে এলেই খালেদার মুক্তি?

অবসরের ঘোষণা নয় বরং তারেক জিয়া ফিরে এলেই কেবলমাত্র খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে, এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে তার আত্মীয় স্বজন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সেই যোগাযোগের প্রত্যুত্তরে সরকারের পক্ষ থেকে এমন মনোভাব গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জিয়া পরিবারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, একমাত্র তারেক ফিরলেই খালেদা জিয়ার প্যারোল বা অন্য কিছু মিলতে পারে। তা ছাড়া আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। এ ব্যাপারে সরকার ন্যূনতম অনুকম্পা দেখাবে না বলে তারা জানিয়েছেন।

বেগম খালেদা জিয়ার কারান্তরীন হওয়ার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই এক বছরে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি কোন গুরুতর আইনী লড়াই করতে পারেনি। রাস্তায় কোন দৃশ্যমান আন্দোলন করতে পারেনি। এমনকি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কোন দর কষাকষিও তারা করতে পারেনি। যার ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি এখন পুরোপুরি জিয়া পরিবারের হাতে চলে গেছে।

গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ধাপে ধাপে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে পারবেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তার দল বিএনপিই কর্মসূচি করেছে মাত্র সাতটি। এছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুই জোট থেকে শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোন কর্মসূচিই নেয়া হয়নি। তবে তারা বিভিন্ন কর্মসূচির ফাঁকে ফাঁকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি এনেছেন।

এদিকে, খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনী লড়াইয়ে বিএনপির আইনজীবীরাই এখন বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের বিভক্তির বড় কারণ হলো তারেক জিয়া। খালেদা জিয়ার মুক্তির আইনী লড়াইটি তিনি তিন তরুণ আইনজীবীর উপর ন্যস্ত করেছেন। যার ফলে দলের সিনিয়র আইনজীবীরা এখন খালেদা জিয়ার মামলার কার্যক্রম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সারাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজটিও বিএনপি ন্যূনতম করতে পারেনি। বরং খালেদা জিয়া একটি ভুলে যাওয়া একটি নাম হিসেবেই রাজনীতির পাতায় স্থান পেয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটেই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে খালেদা জিয়ার আত্মীয় স্বজন স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের উদ্যোগ নেয়। খালেদা জিয়া মুক্তির বিনিময়ে সরকার যা করতে চায় তাতে তারা প্রস্তুত। তারা নিজেরাই সরকারকে বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে তিনি রাজনীতি থেকে অবসরে যাবেন এবং কোন ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতায় তিনি যোগ দেবেন না। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এরকম অবসরের প্রস্তাবের সঙ্গে তারা একমত নন। একজন রাজনীতিবিদকে বিদায় দেয়া বা একজনকে রাজনীতিতে যুক্ত করা সরকারের দায়িত্ব নয়। আওয়ামী লীগ এ রকম রাজনীতিতে বিশ্বাসও করে না। আওয়ামী লীগ কোন মাইনাস ফর্মুলায় বিশ্বাস করে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার প্যারোল বা মামলাগুলোর ব্যাপারে সরকার সহানুভূতির সঙ্গে তখনই বিবেচনা করবে যখন তারেক জিয়া দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করবেন এবং আইনের হাতে নিজেকে সোপর্দ করবেন। সরকার মনে করছে যে, খালেদা জিয়ার অপরাধের চেয়ে তারেক জিয়ার অপরাধ অনেক গুরুতর। এই অপরাধের বিচার অবশ্যই ;হওয়া উচিৎ। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সরকার তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি জিয়া পরিবারকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তারেক যদি স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে এসে আত্মসমর্পণ করেন তাহলে খালেদা জিয়ার জামিন এবং মামলার বিষয়গুলো সরকার সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করলেও করতে পারে।