তানোরে বিএনপির প্রার্থী সঙ্কট

তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার মধ্যে ১৩টি পৌরসভায় জানুয়ারিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের এমন ঘোষণার পর মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে বর্তমান মেয়ররা মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতমধ্যে তারা ব্যানার-ফেস্টুন-প্যানা ইত্যাদি ছড়িয়েছেন জনবহুল স্থান ও মোড়ে মোড়ে। ভোটারদের কাছে না গিয়ে তারা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ঘন ঘন ঢাকায় ছুটছেন।এদিকে তানোর পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে গত ৫ বছরে নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় জমেছে। অসদাচরণ, কাঙ্খিত সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়া, অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতার অভাব, বরাদ্দ ও প্রকল্পের টাকার সিংহভাগ লোপাট এবং পৌরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে চরম উদাসীন থেকে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন তারা। তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন না হওয়ায় এই দুটি পৌরসভার চেহারা প্রায় বিবর্ণ। উন্নয়ন বলতে কিছুই হয়নি। পৌরসভা হলেও এখানে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মতো নাগরিক সেবা নাই এমনকি ১২ থেকে ১৮ মাস কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনভাতা ও বিপুল অঙ্কের টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, তানোর পৌরসভার বছরেরাজস্ব আয় প্রায় দেড় কোটি টাকা আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতায় প্রয়োজন প্রায় ৮০ লাখ টাকা তার পরেও কেনো বেতনভাতা বাঁকি-? 

জানা গেছে, তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বিএনপি নেতা। পৌরবাসীর অভিযোগ, গোটা পৌর এলাকা যেন একটা ভাগাড়। সম্প্রতি উন্নয়ন প্রকল্পের একটা বড় বরাদ্দ পেয়েই  কিনেছেন দামি গাড়ি ও রাতারাতি বানিয়েছেন নতুন বাড়ি। এছাড়াও আয়ড়্যা মোড়ে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে মাল্টা ও পেয়ারা বাগান  করেছেন। ইতমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) থেকে তার সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। অন্যদের মতো সরকারি বরাদ্দ লোপাট, ভিজিডি চাল চুরি, নিয়োগ বাণিজ্য, নাশকতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও টেন্ডার দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় বিএনপির কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি-আত্নীয়করণ, দলীয় কোন্দল সৃস্টির অভিযোগে বিএনপির একাংশ তার ওপর নাখোশ, তাই তারা প্রতিশোধ নিতে মরিয়া নির্বাচনের মোক্ষম সুযোগ তারা হাতছাড়া করতে  চাই না। এসব কারণে পৌরবাসীর কাছে তাঁর চরম ইমেজ সংকট সৃস্টি হয়েছে। একদিকে তাকে দিয়ে এবার বিএনপির পক্ষে  বিজয়ী হওযা প্রায় অসম্ভব, অন্যদিকে পৌর বিএনপিতে তার বিকল্প নেতৃত্বও গড়ে উঠেনি। ফলে পৌর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। তানোর পৌরসভার বর্তমান মেয়রকে আবারও মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে দলের ভরাডুবির ব্যাপক আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন  তানোর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ত্যাগী নেতা এসএম মালেক মন্ডল। তিনি বলেন, বর্তমান মেয়রের ভাবমূর্তি তলানিতে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন। 

অপরদিকে তানোর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী ও বিশিস্ট সমাজ সেবক আবুল বাসার সুজন এটা প্রায় নিশ্চিত। কিন্ত্ত তার পরেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছে একশ্রেণীর বগী নেতা। অধিকাংশের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার মতো জনবল ও যোগ্যতা নাই। অথচ মেয়র প্রার্থীর ঘোষণা দিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদিপ সরকার বলেন, নৌকার মালিক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি সম্পুর্ণ তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি বলেন, এখােন পর্যন্ত্য আবুল বাসার সুজন সবদিক দিয়েই এগিয়ে রয়েছেন, সেই বিবেচনায় বলা যেতেই পারে তিনিই দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত।