তাঁরাও বিদায় নিচ্ছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানিতে গিয়ে ঘোষণা করেছেন, তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন না। এটাই তার শেষ মেয়াদ।

আওয়ামী লীগ সভাপতির এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা -কল্পনা শুরু হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু আওয়ামী লীগ সভাপতি নন, একটা প্রজন্ম আর আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এই মেয়াদটাই তাদের শেষবারের মত জাতীয় সংসদে দেখা যাবে। এরা রাজনীতিতে নতুনদেরকে সুযোগ এবং অবসর জীবন যাপনের জন্য একাদশ নির্বাচনের পর আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। তারা রাজনীতিকে বিদায় জানাবেন।

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন-

বেগম সাজেদা চৌধুরী : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই তার অংশগ্রহণের কথা ছিল না। তখনই তার রাজনীতিকে বিদায় জানানোর কথা ছিল। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথমে তাকে মনোনয়ন না দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত পান। এবং নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়ে সংসদ উপনেতা হিসেবে টানা তৃতীয়বারের মত দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের সর্বজন শ্রদ্ধেও প্রবীণ এই নেতার এটাই শেষ নির্বাচন বলে জানা গেছে। এবারের পরে তিনি আর রাজনীতি করবেন না এবং রাজনীতি থেকে একরকম অবসর গ্রহণ করবেন। এই মেয়াদেই তার রাজনৈতিক ভূমিকা অত্যন্ত সীমিত। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শুধু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছেন।

আমির হোসেন আমু : এটাই তাঁর শেষ নির্বাচন। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের এমন কথা জানিয়েছেন। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রচারণাকালেও তিনি বলেছেন, এরপরে আর তিনি নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন না। তরুণদের জায়গা করে দিবেন। তিনিও বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় আছেন। তিনি মনে করেন, রাজনীতি থেকে প্রত্যেকেরই সরে যেতে হয়। একটা অবসরের সময় আছে। তার বয়স হয়েছে, এখন তিনি নতুনদের জায়গা করে দেওয়ার জন্য রাজনীতি থেকে অবসর নিবেন।

তোফায়েল আহমেদ : ২০২৩ সালে যখন এই সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। তখন তোফায়েল আহমেদ আশির্ধো বয়:প্রবীণে পরিণত হবেন। এই সংসদের পর আর নির্বাচন করার আগ্রহ নেই। বাকিটা সময় যদি তিনি বেঁচে থাকেন, তাহলে তিনি অবসর জীবন যাপন, লেখা লেখি এবং বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করেই সময় কাটাতে চান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাকে আর দেখা নাও যেতে পারে।

বেগম মতিয়া চৌধুরী : আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বেগম মতিয়া চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের দু:সময়ের কান্ডারি। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা তাকে আওয়ামী লীগে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে। এবারের নির্বাচনের পর তিনিও বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আর অংশগ্রহণ করবেন না। এবার তিনি মন্ত্রীত্ব বঞ্চিত হয়েছেন এবং তাকে কৃষিবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। তিনিও বিভিন্ন অসুখ বিসুখে ভুগছেন। তবে অসুখ-বিসুখ নয়, তিনি মনে করেন দীর্ঘদিন রাজনীতি সংগ্রাম করেছেন। এখন তার একটু অবসরের সময়। এবার নির্বাচনের পর তিনি আর নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এইভাবে আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতার জন্য এবার শেষ পার্লামেন্ট। সেদিক থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ একটা তাৎপর্য বহন করছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী রাজনীতির গতি নির্ধারক যে বড় বড় জাতীয় নেতৃবৃন্দ, তাদের রাজনীতির অধ্যায় শেষ হবে এই সংসদের মধ্য দিয়ে। রাজনীতিতে তাদের যে শুন্যস্থান, সেটা কিভাবে পূরণ হবে, সেটাই রাজনীতির সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।