ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ৩ হাজার কোটি টাকার ‘অনিয়ম’

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেল্টা লাইফের সাবেক সিইও আদিবা রহমান

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ডেল্টা লাইফে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে বিশেষ অডিটে উঠে এসেছে। বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে কোম্পানিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস দিয়ে এই অডিট করা হয়।

অন্যদিকে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্টের তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন ডেল্টা লাইফের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমান। তার অভিযোগ, ডেল্টা লাইফে প্রশাসক বসানোর উদ্দেশ্য ছিল আমাদের বিরুদ্ধে কিছু মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আসা। এখন আইডিআরএকে ডিফেন্স করার জন্য প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে।

ডেল্টা লাইফে আরও যেসব অনিয়ম পেয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান-
১. বিমা আইন পরিপন্থি ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে কোম্পানির ৭৮ লাখ টাকার ফান্ড স্থানান্তর।
২. এক কোটি ৪৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকার ক্যাশ ব্যালেন্স ফেব্রিকেশন।
৩. হিসাবভুক্ত না করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে নগদ প্রদান ও ৮৮ লাখ ৪ হাজার টাকা সন্দেজনক লেনদেন।
৪. পরিচালক বিদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে কোম্পানির এক কোটি ১০ লাখ ৬ হাজার টাকা অপচয় করেছেন।
৫. কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সিইওর ১৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা বেতন গ্রহণ।
৬. আইটি সিস্টেম কিনে কোম্পানির তিন কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ক্ষতিসাধন।
৭. আয়কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়কে ভুল খাতে হিসাবভুক্ত করা ও আয়কর বকেয়া ৩৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
৮. বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে আরোপ করা ব্যক্তিগত জরিমানা বাবদ ছয় লাখ ৮৬ হাজার টাকা কোম্পানি থেকে প্রদান।
৯. ডিলিস্টেড এবং ওটিসি শেয়ার কিনে আর্থিক ক্ষতি, শেয়ারের ক্লোজিং ব্যালেন্সের গড়মিল এক কোটি ৩৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
দেশের জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সব থেকে বড় প্রতিষ্ঠান ডেল্টা লাইফ। তবে দীর্ঘদিন ধরেই কোম্পানিটির মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সম্প্রতি বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও ডেল্টা লাইফের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিন ডজন মামলার ঘটনাও ঘটেছে। ডেল্টা লাইফের মালিকদের একটি অংশের সঙ্গে আইডিআরএর দ্বন্দ্বের জেরে প্রায় এক বছর ধরে প্রশাসক দিয়ে চলছে এই জীবন বিমা কোম্পানিটি।
উল্লেখ্য, আইডিআরএ এবং ডেল্টা লাইফের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয় ২০২০ সালে। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সিইও হিসেবে পুনর্নিয়োগের আবেদন করেন আদিবা রহমান। কিন্তু ১৬ নভেম্বর তার আবেদন বাতিল করে আইডিআরএ। এরপর একই বছরের ৮ ডিসেম্বর ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয় আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। দুদকে অভিযোগ করার পর ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেও একই অভিযোগ করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডেল্টা লাইফের সাবেক সিইও আদিবা রহমান।