ঠাকুরগাঁওয়ে প্রকৃত আসামীকে বাদ দিয়ে ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার, কোটি টাকা মানহানির অভিযোগ

মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে চুরির মামলায় প্রকৃত আসামীকে না ধরে ভুল ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
সোমবার রাত ১০টার সময় বালিয়াডাঙ্গী প্রেস ক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন গ্রেফতার হওয়া ভুল ব্যক্তি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী রুপসানা আকতার।
গ্রেফতার হওয়া ভুল ব্যক্তি হলেন উপজেলার মহিষমারী গ্রামের আলিম উদ্দীন ওরফে বৈশাখুর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বালিয়াডাঙ্গী বাজারের মেইন রোডে দীর্ঘদিন ধরে মুদি ও মুড়ির ব্যবসা করে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে তাঁর স্ত্রী পাঠ করে বলেন, সোমবার দুপুরে বালিয়াডাঙ্গী বাজারের মেইন রোডে আমার স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকে কয়েকজন লোক তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমিসহ পরিবারের স্বজনেরা থানায় গিয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলে আমার স্বামীর নামে চুরির মামলা রয়েছে বলে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ জানায়। মামলার কাগজপত্র দেখতে চাইলে ঠাকুরগাঁও আদালতে গিয়ে খোঁজ নিতে বলে।
সোমবার বিকালে ঠাকুরগাঁও আদালতে মামলার কাগজপত্র তুলে দেখি যে, ২০১১ সালে ১৬ জুন রাণীশংকৈল থানায় বাইসাইকেল চুরির একটি মামলায় আমার স্বামীকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। মামলার কাগজপত্র যাচাই করে দেখি যে, প্রকৃত মামলার আসামী বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের জিয়াখোর গ্রামের তসলীম উদ্দীন ওরফে বুধু মোহাম্মদের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক নেকমরদ বাজারে বাইসাইকেল চুরি করতে গিয়ে ধরা পরে। ওই সময় বাজারের লোকজন বাইসাইকেলসহ তাকে রাণীশংকৈল থানা পুলিশের হাতে তুলে দিলে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
দীর্ঘ ১০ বছর ওই মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ প্রকৃত আসামীকে গ্রেফতার না করে উপজেলার মহিষমারী গ্রামের আলিম উদ্দীন ওরফে বৈশাখুর ছেলে আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা আলিম উদ্দীন ওরফে বৈশাখু জানান, আমার ছেলের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। কোন অপরাধ সে করেনি। অথচ আমার ছেলেকে চোর এবং আমাকে চোরের বাবা বানিয়ে নিরাপধ ছেলেকে কারাগারে পাঠিয়েছে। আমি আমার ছেলেকে আগামীকাল সকালের মধ্যে ফেরত চাই। সেই সাথে ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না এলে উচ্চ আদালত পর্যন্ত যাবো।
মামলার কাগজপত্রে দেখা গেছে, ২০১১ সালে আব্দুর রাজ্জাক নামীয় আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। তখন তার বয়স ছিল ৩৫ বছর। ২০২১ সালে তার বয়স হবে ৪৫ বছর। অথচ ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী বয়স ৩৩ বছর।
বালিয়াডাঙ্গী বণিক সমিতির সভাপতি ও বড়বাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকরাম আলী জানান, নির্দোষ ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে আদালতে পাঠানোর প্রতিবাদে আগামীকাল কর্মসূচী দেবে বালিয়াডাঙ্গী বণিক সমিতি। সংগঠনের সকলের সাথে রাতেই এ নিয়ে আলোচনায় বসা হবে। অভিযোগ অস্বীকার করে বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুল হক প্রধান মুঠোফোনে জানান, সঠিক আসামীকেই গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন মুঠোফোনে জানান, মামলার নম্বর ও তারিখ আমাকে দিন। বিষয়টি নিয়ে ওসির সাথে কথা বলব ৷