ঝুঁকিতে পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ; ইউপি মেম্বারের নেতৃত্বে কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে কৃষি জমির ও শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ের মাটি অবৈধভাবে কেটে স্থানীয় ইট ভাটায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে জামালপুর ইউনিয়নের ৭ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নাজমুল শেখের বিরুদ্ধে। তবে অবৈধভাবে মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পল্লী বিদ্যুতের প্রধান সঞ্চালন লাইনের বেশ কিছু খুঁটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এবং ওই ইউনিয়নের ৭ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজমুল শেখের নেতৃত্বে স্থানীয় আরো কয়েকজন যুবলীগ নেতাকে নিয়ে জামালপুর গ্রামে কৃষি জমির মাটি অবৈধভাবে কেটে নিয়ে স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রি করছে।এ ব্যাপারে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গেলে ওই যুবলীগ নেতা তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং তার অনুসারীরা স্থানীয়দের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে কৃষি জমির মাটি এবং শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেছে। ফলে ওই এলাকায় থাকা পল্লী বিদ্যুতের প্রধান সঞ্চালন লাইনের খুঁটিগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় মাটির সঙ্গে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো ধসে পড়ে দীর্ঘদিনের জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে পুরো কালীগঞ্জ।
সূত্র আরো জানায়, বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে জানালে রোববার (১৬ মে) সকালে ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ কালীগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. কামরুজ্জমানকে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
তবে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম বলছেন অন্য কথা। তিনি জানান, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলাম।পরে জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান ফারুক মাস্টার দায়িত্ব নিয়েছেন।চেয়ারম্যান ৩ দিনের সময় চেয়েছেন আর ৩ দিনের মধ্যে ওই কৃষি জমির কেটে নেওয়া মাটি পূরণ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান ফারুক মাস্টার বলেন, নাজমুল মেম্বার মাটি নতুন কাটছে না।অনেক আগে থেকেই তার লোকজন মাটি কাটছে। এ মাটি কাটার ফলে পল্লী বিদ্যুতের প্রধান সঞ্চালন লাইনের খুঁটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আমি মেম্বারকে ওই খুঁটির পাশে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি। তবে আমি দায়িত্ব নিয়েছি, বিষয়টি ঠিক তা না। তাছাড়া বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম অবগত।তবে বৈদ্যুতিক খুঁটির ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মাটি ও ইট দিয়ে মেরামত করতে ২/৩ দিন সময় লাগবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা জামালপুর ইউনিয়ন ৭ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজমুল শেখ জানান, গত ২ বছর ধরে তিনি ওই এলাকার কৃষি ও শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ের মাটি তার লোকজন দ্বারা স্থানীয় ইট ভাটায় বিক্রি করছেন। হঠাৎ করে পল্লী বিদ্যুৎ অভিযোগ আনে তাদের বৈদ্যুতিক খুঁটি ঝুঁকিতে আছে। যদিও এটা আমার দেখার বিষয়না, তারপরও তারা থানায় অভিযোগ করতে যায়।পরে ব্যবস্থা নেওয়ার শর্তে তা আর করেনি।বৈদ্যুতিক খুঁটির ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মাটি ও ইট দিয়ে মেরামত করা হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম জানান, আসলে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় কৃষি জমির মাটি বিক্রি করছে।সেক্ষেত্রে আমরা স্থানীয় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সচেতন করার চেষ্টা করি। তবে অবৈধভাবে যদি কেউ মাটি কেটে নেয় সেক্ষেত্রে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা বা শাস্তির আওতায় আনা হয়।
তিনি আরো বলেন, কৃষি জমির উপরে পলি জমা মাটি কেউ যদি কেটে নিয়ে যায়, তাহলে সেই জমির পলি পূরণ করতে নানা জৈব সার ব্যবহারের কমপক্ষে ৩০ বছর পরে ওই কৃষি জমির উর্বর ক্ষমতা ফিরে আসে। তবে ওই ৩০ বছরের মধ্যে ওই কৃষি জমিতে কেউ কোন কাজ করতে পারবে না।তাহলেই ৩০ বছর সময়ের মধ্যে জমির উর্বরতা ফিরে আসবে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মিজানুল হক জানান, এ ব্যাপারে থানায় কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক জানান, বিষয়টি শুনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।