ঝিনাইদহ: সাজাপ্রাপ্ত সাবেক এমপি মশিউরের ‘ধর্ষক’ পুত্রের বিচার চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলন

নিজেকে অসহায় দাবি করে নিজের নাতনির প্রতি ন্যাক্কারজনক অন্যায়ের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান ভুক্তভোগী শিশুর নানি মাগফুরা আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজের শিশু সন্তানের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও চিকিৎসক ইব্রাহিম রহমান রুমির বিরুদ্ধে। তিনি ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সাংসদ ও বিএনপি উপদেষ্টা মসিউর রহমানের বড় ছেলে।

আগের খবর পড়তে নিচের ছবিতে ক্লিক করুন 

রোববার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ তোলা হয়। এসময় নিজেকে অসহায় দাবি করে নিজের নাতনির প্রতি ন্যাক্কারজনক অন্যায়ের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান ভুক্তভোগী শিশুর নানি মাগফুরা আহমেদ।

লিখিত বক্তব্যে মাগফুরা আহমেদ বলেন, ২০১৬ সালের ২৬ জুন পারিবারিকভাবে ঝিনাইদহের সাবেক এমপি মসিউর রহমানের ছেলে ইব্রাহিম রহমান রুমি (বাবু) এর সঙ্গে আমার মেয়ে আফিয়া বিনতে শাহের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের দুই মাস পর সামান্য কারণে আমার মেয়েকে বেধড়ক মারধর করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে যৌতুক চেয়ে নির্যাতন করতো। সন্তান গর্ভে থাকাকালেও আমার মেয়েকে মারধর করা হয়। সংসার জীবনে বনিবনা না হওয়ায় গত বছরের ২৬ আগস্ট তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।

তিনি বলেন, অব্যাহত নির্যাতনের কারণে আমি ২০১৭ সালে মেয়েকে ইতালি নিয়ে যাই। তখন আমার মেয়ে গর্ভবতী ছিল। এরপর মেয়েকে বুঝিয়ে দেশে আনার ১৫ দিন পর আবারও তার ওপর নির্যাতন শুরু করে স্বামী। সন্তান জন্মের পরও নানা অজুহাতে দিন দিন নির্যাতন বাড়তে থাকে। সেসময় ঝিনাইদহ থানা পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করে।

বিবাহ বিচ্ছেদের পর চলতি বছরের ২৩ মার্চ বিকাল আনুমানিক সাড়ে চারটায় আমার মেয়ের অনুপস্থিতিতে চার বছরের শিশুকন্যাকে উত্তরার বাসা থেকে নিয়ে যান রুমি। গত ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রুমি তার কন্যাকে কলাবাগানের বাসায় নিজের হেফাজতে রাখেন। ওই সময় ফেরত চাইলেও কন্যাকে নিতে দেননি রুমি। পরে এ বছরের ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশে কন্যাশিশুকে হেফাজতে নেয় তার মা। ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৮টায় আবারও শিশুসন্তানটিকে নিজের কলাবাগানের বাসায় আনেন ইব্রাহিম রহমান রুমি। পরদিন ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে শিশুর মা কলাবাগান থেকে চার বছরের শিশুটিকে উত্তরায় নিজের বাসায় ফিরিয়ে আনেন। বাসায় আনার পর পরিহিত পোশাক পরিবর্তনকালে মেয়ের শরীরে নির্যাতনের ছাপ দেখতে পান তিনি।

অভিযোগ করে শিশুটির নানি বলেন, গত ২৩ মার্চ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর এবং ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত রুমর বাসায় বাচ্চার অবস্থানকালে বিভিন্ন সময়ে শিশুর ওপর নিপীড়ন চালানো হয়। এরপর গত ২৭ নভেম্বর বিকালে নিপীড়নের শিকার শিশুসন্তানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান তার মা। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শিশুটিকে ওসিসিতে (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) ভর্তির জন্য রেফার করেন। ২৭, ২৮ ও ২৯ নভেম্বর নির্যাতনের শিকার শিশুটির যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরে আমার মেয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করেছে। মামলার পর ইব্রাহিম রহমান রুমি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। আমি ধর্ষক ও মাদকাসক্ত ইব্রাহিম রহমান রুমির বিচার চাই।

এসময় তিনি মামলার আসামি ইব্রাহিম রহমান রুমি চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য হলেও তার বিরুদ্ধে এমন পৈশাচিক মামলার পর কেনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে প্রশ্ন তোলেন।

উল্লেখ্য, দুর্নীতির দায়ে বিএনপি নেতা সাবেক এমপি মশিউর রহমান ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন।