ঝিনাইদহে ৫০ বছরের কাদার রাস্তা নির্মাণ নিয়ে ভিলেজ পলিটিক্স!

ঝিনাইদহঃ রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে প্রায় পঞ্চাশ বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ফুরসন্দি ইউনিয়নের জিথড় ভবানীপুর গ্রামের মানুষ। বর্ষা আর পানি কাদায় অতিষ্ঠ গ্রামবাসির দুর্দশা লাঘবে ফুরসন্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মিনা এগিয়ে আসেন। কাবিখা প্রকল্পের ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৯৫ টাকা ব্যায়ে ৬৮০ ফুট রাস্তা নির্মানের পর গ্রামের মানুষ উচ্ছাস প্রকাশ করেন। অথচ এই রাস্তা নির্মানের পর এলাকায় শুরু হয়েছে নোংরা ভিলেজ পলিটিক্স। তারা রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে কাঁদা ছোড়াছুড়িতে মত্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন অখ্যাত অনলাইনে “জোর করে রাস্তা নির্মানের” কথা প্রচার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে “জোর করে” জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণে বাধা দেওয়ায় রাজকুমার মন্ডল ও মনতোষ মন্ডলকে মারধর করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত খবরগুলোর কোন সত্যতা নেই। জিথড় গ্রামের মনোতোষ মন্ডলের বড় ছেলে সনত মন্ডল জানান, ৫০ বছরে বেশি সময় ধরে এই রাস্তাটি বেহাল দশায় ছিল। মানুষ চলাচল তো দুরের কথা গরু ছাগলও চলতে পারতো না। আমি নিজেও রাস্তার জন্য গ্রামে আসতাম না। কৃষকরা ধান, পাট ও কৃষি পন্য মাথায় করে বাড়ি নিয়ে যেতো। সেই রাস্তাটি পাকা হওয়ার কারণে কিছু মানুষের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। মনোতোষ মন্ডল জানান, আমার গোটা জমির উপর দিয়ে রাস্তা গেছে। এতে আমার কোন দুঃখ বা অভিযোগ নেই। বরং যাদের রাস্তা দরকার নেই বা এই রাস্তা ব্যবহার করেন না তারাই সবচে বেশি অপপ্রচারে লিপ্ত। তিনি বলেন কারো উঠানোর উপর দিয়ে রাস্তা যায়নি। কারো ক্ষতিও হয়নি। বরং রাস্তা নির্মাণ করায় মহল্লাবাসির জন্য ভালো হয়েছে। মনোতোষের ভাষ্যমতে, আগে সাইকেল, ভ্যান নিয়ে আসতে পারতাম না। এখন সহজেই আসতে পারছি। রাস্তায় জমি দেওয়া প্রশান্ত বিশ্বাস, তরুণ কুমার লস্কর ও অনন্ত বসু বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সকলের মতামতের ভিত্তিতে রাস্তাটি নির্মাণ করেন। এতে কারো সামান্যতম অভিযোগ নেই। জিথড় ভবানীপুর গ্রামের মাতব্বর সুনিতি বিশ্বাস জানান, মানুষ চেয়ে রাস্তা পায় না, অথচ আমাদের রাস্তাটি হয়েছে এটাই বড় কথা। তিনি বলেন ভিলেজ পলিটিক্সের কারণে এই রাস্তা নিয়ে ব্যাপক অপপ্রচার করা হচ্ছে, যা মোটেও ঠিক না। রাজ কুমার জানান, আমাকে ভুল বুঝিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে কিছু মানুষ প্রলুদ্ধ করেছিল। সেটা আসলে ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, আমিও রাস্তার জন্য জমি দিয়েছি। এখন এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। ফুরসন্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. আব্দুল মালেক জানান, জিথড় ভবানীপুর গ্রামের এই সরু রাস্তাটি ৫০ বছরের অবহেলিত। ফলে গ্রামের দুর্গা মন্দির থেকে তরুন লস্কারের বাড়ি পর্যন্ত ৬৮০ ফুট রাস্তা সরকারী ভাবেই করা হয়েছে। রাস্তা করতে কেও বাধা দেয়নি। কারো জমিও জোর করে নেওয়া হয়নি। রাজ কুমার নামে যে বিরোধিতা করে বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি নিজেও দুই ফুট জায়গা দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাস্তা নির্মানে কেও বাধা দিলে পিআইও অফিসের ইঞ্জিনিয়ার বা ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়াল অনুযায়ী ফ্ল্যাট সলিং করা যেতো না। যারা এখন এ রাস্তা নির্মাণের বিরোধিতা করছে তারা এলাকার উন্নয়ন চাই না বলে মনে করি।