ঝিনাইদহের যুবলীগ নেতা শান্তি হত্যা মামলার রায় ১৮ অক্টোবর

ওমর আলী সোহাগ, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের সাবেক যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন মন্ডল(শান্তি) হত্যা মামলা (মামলা নং এসটিসি ১০৯/১১ ও এসসি ১৪৫/১৩) এর রায় ঘোষণার তারিখ আগামী ১৮ অক্টোবর ধার্য্য করেছেন বিজ্ঞ আদালত। ৫ অক্টোবর মামলার আর্গুমেন্ট শেষে জামিনে থাকা আসামিদের কারাগার হেফাজতে পাঠান ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ শওকত হোসাইন। ২০১০ সালের ৭ জুলাই গান্না বাজার থেকে কাশিমনগর গ্রামের বাড়িতে ফেরার পথে সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে কাশিমনগর ব্রিজের উপর থেকে পরিকল্পিত বোমা হামলার শিকার হয় তৎকালীন ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন মন্ডল (শান্তি)। শান্তি কাশিমনগর গ্রামের মৃত সাহার আলী মন্ডলের ছেলে। এই ঘটনার ২ দিন পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ঝিনাইদহ সদর থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন শান্তির শ্বশুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মালিথা। পুলিশ প্রথমে এই মামলায় ৮ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে ৩ জন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ১৬৪ ধারামতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তারা গান্না বাজারের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন মালিথা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা হিসাবে উল্লেখ করেন। ২০১১ সালের ২৪ অক্টোবর পুলিশ ১১ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে হত্যার সাথে ১১ জন জড়িত মর্মে উল্লেখ করা হয়। নাসির উদ্দিন মালিথা কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা গ্রামের মৃত শহর আলী মালিথার ছেলে। তিনি ব্যসার সুবাদে গান্না বাজারে জমি কিনে বসবাস করেন এবং গান্না ইউনিয়ন যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি গান্না ইউনিয়ন যুবদলের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে এর মধ্যে ৩ জন মৃত্যু বরণ করেছে মামলা চলাকালীন। নাসির উদ্দিন মালিথা এই মামলায় প্রায় ৩ মাস কারাগারে রয়েছে। মামলার সকল স্বাক্ষীদের জেরা শেষে ৫ অক্টোবর আর্গুমেন্ট হয়। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেন পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডঃ ইসমাইল হোসেন এবং আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডঃ রজব আলী,অ্যাডঃ হাদি,অ্যাডঃ আশরাফুল জোয়ার্দার ও মাহফুজুর রহমান। এই মামলার বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন গান্না ইউনিয়ন পরিষদের বরখাস্ত চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন মালিথা, আঃ করিম,লাভলু,নাসির বিশ্বাস,মিজান টাক,মনি। এই মামলার আসামি ইদু ও শান্তি পলাতক রয়েছে। মারাগেছে মশিয়ার,কুদ্দুস ও উজ্জ্বল নামের তিন আসামি। এই মামলার আসামি নাসির উদ্দিন মালিথা ২০১১ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্রেফতারি পরোয়ানা গোপন করে স্বদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। এর মধ্যে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে ২০১৬ সালে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই মামলায় কারাগারে গেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এই মামলার অপর আসামি নাসির বিশ্বাসের পরিবারের অভিযোগ। এই মামলা থেকে নাসির চেয়ারম্যান বাঁচতে কৌশলে তার স্থানে কোটচাঁদপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের মৃত নায়েব বিশ্বাসের ছেলে নাসির বিশ্বাসকে মামলায় গ্রেফতার করে এই মামলার সাথে জড়িয়েছে। মামলায় আটক নাসিরের মা গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, গান্না পশুহাট কেন্দ্র করে তালিনা গ্রামের শহর আলী মালিথার ছেলে নাসিররা মিলে যুবলীগ নেতা শান্তিকে মার্ডার করায়। কিন্তু নাসির চেয়ারম্যান নিজে বাঁচতে এই মামলায় আমার ছেলেকে জড়িয়েছে। আমার ছেলে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নয়। ঝিনাইদহ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, ৫ অক্টোবর যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন মন্ডল শান্তি হত্যা মামলার আর্গুমেন্ট হয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষে আমি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করি। আসামি পক্ষের উকিলরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী ১৮ অক্টোবর এই মামলার রায় ঘোষণা করার দিন ধার্য্য করেছেন বিজ্ঞ আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ আশাবাদি আসামিদের দৃষ্ঠান্ত মূলক সাজা হবে।