ঝিকরগাছার বোধখানা মহিলা দাখিল মাদ্রাসার অপকর্মের শেষ কোথায় ?

আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার উপজেলার ৪নং গদখালী ইউনিয়নের বোধখানা মহিলা দাখিল মাদ্রাসা (১১৫৭৮৮) নামক একটি প্রতিষ্ঠানের অপকর্মের শেষ কোথায় ? প্রতিষ্ঠানের অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বিগত দুমাস যাবৎ একাধিকবার জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক, অনলাইন প্রিন্ট মিডিয়া ও জাতীয় সাপ্তাহিকে ধারাবাহিক ভাবে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরও সেই অনিয়মের বিরুদ্ধে সঠিক ভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে অনিয়মের সাথে সংযুক্ত ব্যক্তি বা তাদের নিকটতম ব্যক্তিদের সাথে আতাত করে ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের রেহায় পাওয়ার পথ দেখিয়ে দিচ্ছে একটি মহল বলে অভিযোগ উঠেছে।

মাদ্রাসাটি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধিনে সর্বশেষ ২০২১সালের ২২ ফেব্রুয়ারী রিক/নবায়ন/২২৫২১১১৫৭৮৮১/নথি নং/৭১১৭ নং স্মারকের অফিস আদেশে ০১/০১/২০২১ হতে ৩১-১২-২০২২ইং তারিখ পর্যন্ত দাখিল স্বীকৃতির মেয়াদ শেষে হয়ে গেছে ও মাদ্রাসার দু’টি শিক্ষকের কর্মকান্ডের উপর সংবাদ প্রকাশ হলেও কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নিয়মমাপিক বেতন ভাতা দিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অন্যায় ও অনিয়ম হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বোধখানা মহিলা দাখিল মাদ্রাসার কর্মরত জুনিয়ার মৌলভি শিক্ষক কবির হোসেন (২১০৪১০৮) নামে ভূয়া নিবন্ধনের সনদধারী জাল/জালিয়াতির আশ্রয়ে চাকরী নিয়ে ১৩বছর যাবৎ বিশাল তবিয়তে চাকরী করে ভুয়া সার্টিফিকেটকে পরবর্তীতে শুদ্ধ করা হয়েছে বলে ভূক্তভোগীর দাবি। কিন্তু যে ভুয়া সার্টিফিকেটে শিক্ষক কবিরের চাকরী হয়েছে সেই শিক্ষকের চাকরী কতটা যৌক্তিক। ভুয়া সার্টিফিকেটের চাকরীর বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এ ২০২১ সালের ০১ ডিসেম্বর আবেদন দাখিল করেন। যার সূত্র ধরে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর দ্বারা বিগত ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৩৭.০৫.০০০০.০১০.০৫.০০২.২০.৭৪৬নং স্মারকে শিক্ষক নিবন্ধন যাচাইয়ের বিষয়ে মাদ্রাসার জুনিয়ার মৌলভি শিক্ষক কবির হোসেনের শিক্ষকের সনদধারী জাল/জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে দালিলিকভাবে প্রমাণিত হলেও জাল ও ভূয়া সনদধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে থানায় মামলা দায়ের পূর্বক অত্র অফিসকে অবহতি করার জন্য সুপার (ভারপ্রাপ্ত) কে নির্দেশনা দেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর সহকারী পরিচালক (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন-৩) তাজুল ইসলাম। কিন্তু উক্ত স্মারকের বিষয়ে অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। তবে ২০২১সালের প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি কবিরের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন বলে শোনা যায়। কিন্তু অদ্যবধি সে বেতন ভাতা উত্তলন করছে।

বর্তমানে কবির হোসেনে ভূয়া নিবন্ধনের সনদধারী জাল/জালিয়াতির আশ্রয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিশাল তবিয়তে চাকরী করে যাচ্ছে। জাল/জালিয়াতি করে ১৩বছর যাবৎ সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ সরকারের কোষাগারে জাল/জালিয়াতি করে মাসের পর মাস যে অর্থ গ্রহণ করেছে। সেই গ্রহণকৃত অর্থ সরকারি তহবিলে ফেরৎ নিতে প্রশাসনের নিকট এলাকার সচেতন মহল জোর দাবী জানান।

এছাড়াও মাদ্রাসার ইবতেদায়ি কারি শিক্ষক মাকছুদা (৩৭২৫৫৫) শারিরিক সমস্যা দেখিয়ে বিগত প্রায় ৩বছর মাদ্রাসায় কোনো ক্লাস নেননি। কখনো ২/৩ মাস পরে আবার কখনো মাসে এক-দু’বার প্রাইভেট কারে করে মাদ্রাসায় এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে যান এবং প্রতিমাসে বেতনের সমুদয় টাকা উত্তোলন করেছেন। মাকছুদার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতির চাচাতো বোন সালমা খাতুনকে। তাকে প্রতি মাসে ৭হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হয় বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ও সভাপতি এ বিষয়ে মুখ খোলেন না।

মাদ্রাসার ইবতেদায়ি কারি শিক্ষক মাকছুদা বলেন, আমি অসুস্থ। আমাকে নিয়ে যারা এমন করছে তাদের নিয়ে আল্লাহ কাছে বিচার দিলাম। আল্লাহ তাদের বিচার করবে। তবে বসে বসে ৩বছর বেতন নেওয়ার বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আমি তো আমার পরিবর্তে সালমাকে দিয়েছি। সালমাকে আমি মাসে মাসে কিছু সম্মানী দি। বোধখানা মহিলা দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মোঃ জহুরুল হকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

মাদ্রাসার সভাপতি ও আর.এম রিসালাহ মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক এস.এম মশকুর আলমের নিকট মাদ্রাসার দুই শিক্ষকের বিগত অক্টোর মাসের বেতন ভাতা প্রদান করা হয়েছে কি না এই সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি সংবাদকর্মীকে রাগানীত ভাষায় বলেন, আপনার কি দরকার! সংবাদ প্রকাশের জন্য দরকার বললে তিনি বলেন, মাদ্রাসার সুপারের সাথে যোগাযোগ করে দেখেন সে আমার নিকট বেতন সাবমিট করেছে কিনা। তখন সুপারের মোবাইল নাম্বার বন্ধ থাকার কথা বললে তিনি আচ্ছা বলে ফোন কল কেটে দেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল হকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেনি।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর সহকারী পরিচালক (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন-৩) তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের কার্যক্রম আমরা করেছি। আপনারা আপনাদের লিখনীর মাধ্যমে বিষয়টা ফুটিয়ে তোলোন এবং স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে অবহিত করনে।