ঝালকাঠিতে মাঝনদীতে লঞ্চে আগুন, ৩০ লাশ উদ্ধার

এই আমার দেশ ডেস্ক

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে গভীর রাতে একটি লঞ্চে ভয়াবহ আগুনে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে এ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়েছেন আরও বহু যাত্রী। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো বার্তায় জানানো হয়েছে, পোড়া ওই লঞ্চ থেকে এ পর্যন্ত ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। ৭২ জনকে আহত ও দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকার সদরঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ এর পরিবহন পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রায় চারশ যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। চাঁদপুর ও বরিশাল টার্মিনাল লঞ্চটি থামে এবং যাত্রী উঠা-নামা করে।

তবে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলেছেন, তিন তলা ওই লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের সময় হাজারখানেক যাত্রী ছিলেন। ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার পর লঞ্চে আগুন ধরে যায়। পরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকায় নদীর তীরে লঞ্চটি ভেড়ানো হয়।

প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা ওই লঞ্চ থেকে প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন যাত্রীদের অনেকে। স্থানীয়রা ভিড় করেন নদী তীরে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও সেখানে যান। ট্রলার নিয়ে লঞ্চের আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন তারা।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, রাত ৩টা ২৮মিনিটে তাদের কাছে অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে। তাদের কর্মীরা ৩টা ৫০ মিনিটে সেখানে পৌঁছে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেন।

এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় উপ পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের চেষ্টায় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানীয় বাসিন্দা, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতা করেন।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, যেখানে লঞ্চটিতে আগুন লেগেছে, ওই এলাকা ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। লঞ্চের ইঞ্জিনরুমের অংশটি বেশি পুড়েছে। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা।

ওই লঞ্চের বেঁচে যাওয়া যাত্রী আব্দুর রহিম জানান, রাতে ডেক থেকে তিনি হঠাৎ বিকট শব্দ পান। তারপর লঞ্চের পেছন দিক থেকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে দেখেন। অল্প সময়ের মধ্যে আগুন পুরো লঞ্চ গ্রাস করে ফেলে। আতঙ্কিত হয়ে তিনি ডেক থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়েন।

দিয়াকুল গ্রামের লোকজন নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছিলেন। তারাই রহিমকে উদ্ধার করে গরম কাপড় দেন। পরে সকালে তাকে ট্রলারে করে ঝলাকাঠি শহরে নেওয়া হয়।

আহতদের মধ্যে ৭০ জনকে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় জানিয়ে পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে বার্ন ইউনিট বন্ধ। যারা এসেছেন তাদের অনেকেই দগ্ধ হয়েছেন। ৬৭ জনকে সার্জারি ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”

অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হাম জালাল বলেন, লঞ্চের কেরানী আনোয়ার ভোর রাত ৩টার ৫মিনিটে তাকে ফোন করে আগুন লাগার খবর দেন।

 

“সে বলেছে দোতলায় একটা বিস্ফোরণ হয়, সঙ্গে সঙ্গে কেবিনে আর লঞ্চের পেছনের বিভিন্ন অংশে আগুন দেখা যায়। তারপর তৃতীয় তলার কেবিন ও নিচতলায় ছড়িয়ে পড়ে আগুন।”

হাম জালাল বলছেন, ওই লঞ্চে অন্তত ২১টি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল, কিন্তু এত দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে যে সময় পাওয়া পায়নি।

“একটি পাইপ গেছে ইঞ্জিন থেকে, সেখানে প্রথম বিস্ফোরণ হয় বলে আনোয়ার আমাকে জানিয়েছে।”

হাম জালাল এম ভি অভিযান-১০, ৩ ও ৫ লঞ্চের মালিক। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানান তিনি।

বিআইডিাব্লউটিএ এর তরফ থেকে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানানো হয়েছে। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল এবং ঝালকাঠির ডিসি মো. জোহর আলী সকালে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন।

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সকালেই তিনি ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন বলে জানান নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম।।