জয়ার না যানা কথা

যাঁর জোরালো অভিনয় দুই বাংলায় প্রশংসিত। নতুন ছবি মুক্তির মুহূর্তে জানালেন নানা কথা। আড্ডায় আরত্রিকা দে।

সদ্য মুক্তি পেয়েছে শিবপ্রসাদ-নন্দিতা রায় পরিচালিত ছবি ‘কণ্ঠ’। সেই ছবিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গিয়েছে অভিনেত্রী জয়া আহসানকে। শিল্প যে দুই বাংলাকে এক সুতোয় গাঁথে একথা জোরালোভাবে দাবি করা যায় ওপার বাংলার এই অভিনেত্রীর দাপুটে অভিনয় দেখে। কারণ তাঁর একের পর এক ছবি মুগ্ধ করে চলেছে দুই বাংলার দর্শককেই। জন্ম বাংলাদেশেও হলেও দুই বাংলাই যে তাঁর প্রাণের সে কথা জানালেন অভিনেত্রী।

কণ্ঠের প্রচারে তোমাকে খুব একটা বেশি পাওয়া যায়নি, অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলে?
জয়া: হ্যাঁ, একটা বিশেষ কাজে বাংলাদেশ গিয়েছিলাম। মাঝে মধ্যেই তো আমায় ওপার বাংলায় যেতে হয়। এবারও একটু কাজ পড়ে গিয়েছিল (হাসি)।

ভারত থেকে বাংলাদেশের এই অনবরত যাতায়াত করতে হয়, নিজেকে সময় দাও কখন?
জয়া: প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হত। এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে সত্যি বলতে নিজের জন্য একেবারে সময় পাই না গো। তারমধ্যেই সময় বের করতে হয়। নিজের জন্য সময় নিয়ে ভাবলে তো আর কাজগুলো করা হবে না।

একটু অতীতে যাব, অভিনয়ের শুরু বাংলাদেশ থেকে, ভারতের যাত্রাটা কেমন করে শুরু হল?
জয়া: আমি প্রথমে মডেলিং করতাম, সেই সুবাদেই অরিন্দমদা আমার কাজ দেখে প্রথম ছবি করার প্রস্তাব দেন। এইভাবেই যাত্রা শুরু হয়। আজও আমি ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
কমার্শিয়াল ছবিতে তোমাকে কখনও দেখা যাবে?

জয়া: দেখো আমার কোনও কিছুতেই আপত্তি নেই। যদি সেটা শিল্পমানের হয়। অর্থনৈতিক লেনদেন যাতে থাকবে সেটাই তো কমার্শিয়াল ছবি। তবে তখনই সেটা করব যখন সেটা শিল্পমানের মানে একটু অন্যরকম হবে।

তোমার খুব সার্থক একটা চরিত্র পদ্মা, সেখানে প্রায় সকলকেই বাঙাল ভাষায় কথা বলতে দেখা গিয়েছে। বাংলা ভাষায় বাংলা ছবিতে কতটা সঠিকভাবে বাঙাল ভাষার প্রয়োগ হয়?

জয়া: একেবারেই হয় না, আসলে বাংলা ভাষা বলে কিছু হয় না। আর সেটা যেমন ভাবে ব্যবহার করা হয় সেটা একেবারেই সঠিক নয়। তবে কৌশিকদা খানিকটা সঠিক উচ্চারণ করেন, বাকি বেশিরভাগ অভিনেতাই এই উচ্চারণ রপ্ত করতে পারেনি। এই ধরনের ছবি দেখে বাংলাদেশের মানুষ খুব কষ্ট পান। আবার একই সঙ্গে যখন আমায় ‘বিসর্জন‘-এ অভিনয় করতে দেখে তখন খুব আনন্দ পায়, কারণ আমি সঠিকভাবে উচ্চারণ করেছি এটা ভেবে।

যখন কোনও ছবি সাইন করো তখন কি বাংলাদেশের দর্শকের কথা মাথায় রেখে করো?
জয়া: সেটা তো কিছুটা থাকেই। তবে সর্বপ্রথম নিজের ভাল লাগার কথা ভাবি। তারপর দুই বাংলার দর্শকের কথাই ভাবি। কারণ, সকলের ভালবাসায় আজ আমি এই জায়গায়। সুতরাং কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। (হাসি)।

শুধু অভিনয় নয়, ‘দেবী’তে তোমায় প্রয়োজকের ভূমিকায়ও দেখা গিয়েছে? ভারতে কি কখনও এই ভূমিকায় কাজ করবে?
জয়া: এখানে সম্ভব হলে আমি করব, তবে এখানে বেশ কিছু লিমিটেশন আছে বাইরের দেশে নাগরিকদের কাজ করার। সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই করার ইচ্ছা আছে।

কলকাতা থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার সময় সঙ্গে কী কোন জিনিসটা নিয়ে যাও?
জয়া: সঙ্গে করে পাতিলেবু নিয়ে যাই। কলকাতার পাতিলেবু ছাড়া আমি একদম চলতেই পারি না। আমার লাগেজ খুললেই পাতিলেবু পাবে। তাছাড়া আমার একজন রিট্রোভার বোন আছে, তার জন্য খেলনা নিয়ে যেতে হয়।

কখনও অবসর পেলে কী করতে ভাল লাগে?
জয়া: আমার গার্ডেনিং করতে খুব ভাল লাগে। বিভিন্ন গাছের কালেকশন তুমি আমার কাছে পাবে। আর একটা বিষয়, যদি কখনও সময় পাই তাহলে আমার এক রিট্রোভার বোন আছে ওর নাম ক্লিওপেট্রা। তার সঙ্গে সময় কাটাই। ওই মুহূর্তটা আমার খুব কাছের।

অনেকদিন হল ভারতে এসেছ। কলকাতা কতটা কাছের হয়ে উঠেছে?
জয়া: এখন থেকে নয়, কলকাতা ববাবরই আমার কাছের। কারণ, যুদ্ধের সময় কলকাতায় এসে আমার বাবা ট্রেনিং নিয়েছিলেন। আজ উনি থাকলে খুব খুশি হতেন যে আমি কলকাতায় কাজ করতে পারছি। আসলে আমি কখনও মনেই করি না কলকাতা বা ভারত আলাদা একটা দেশ। বরং আমার মনে হয় জোর করে দুই ভাইকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রথম উইনডোজের সঙ্গে কাজ করলে, শিবুদা নন্দিতাদি পরিচালক হিসাবে বাকিদের থেকে কতটা আলাদা?
জয়া: সবাই সবার মতো করে আলাদা। তবে একটা বিষয়, শিবুদা-নন্দিতাদি সেটে কোনও কথা বলেন না। বিষয়টা আগে থেকে মাথায় ঢুকিয়ে দেন। তাতে করে শিল্পীদের সহজাত সত্তায় এক অনবদ্য জিনিস বেরিয়ে আসে। ওঁদের ব্রিফিংটা অসাধারণ।

তোমায় নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে বহু বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কখনও তোমার বয়স নিয়ে কখনও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কী বলবে?
জয়া: খুব কষ্ট পাই এটা ভেবে যে দর্শকরা খুব বিশ্বাস করেন এই ধরনের গুজব। আমার একটাই অনুরোধ, দয়া করে দর্শকদের বিভ্রান্ত করবেন না। সবারই ব্যক্তিগত কিছু স্পেস আছে। সেটা নিয়ে এই ভাবে ট্রোল্ড করা অনর্থক।

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথা শোনা গিয়েছে, এ বিষয়ে তোমার প্রতিক্রিয়া কী?
জয়া: কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। এইসব মিথ্যে গুজবে কী আর প্রতিক্রিয়া দেব, শুধু এটুকু বলতে পারি, বিষয়টা একেবারেই গুজব। এই সব গুজবে আমি একদম পাত্তা দিই না।

তোমার মনের মানুষ কি ভারতে না বাংলাদেশে? তাঁর নাম কি বলা যাবে?
জয়া: (হেসে) সেটা তো এখনই বলা যাবে না।

কোনও কাঙ্ক্ষিত চরিত্র আছে যেটা করা হয়নি কিন্তু করতে চাও?
জয়া: প্রচুর আছে, তবে আমি একটা পুরুষের চরিত্র করতে চাই।

এখনও পর্যন্ত করা সবথেকে কাছের চরিত্র কী?
জয়া: ‘দেবী’-র রানু, ‘বিজয়া’, ‘বিসর্জন’-এর পদ্মা। আরও অনেক আছে গুনে বলা মুশকিল।

সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ-নন্দিতা। কাকে এগিয়ে রাখবে?
জয়া: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ-নন্দিতা। সকলেই আমার ভীষণ প্রিয়।

সোহিনী সরকার, মিমি চক্রবর্তী, পাওলি দাম, জয়া আহসান?
জয়া: কাউকে এগিয়ে রাখব না তবে নিজেকে শেষে রাখব।