জ্বীন পরীদের ক্ষপ্পরে কুষ্টিয়া দেখার কেউ নেই!

আলীফ আজগর সবুজ : নাম তার স্বর্পরানী চায়না কবিরাজ। বছর দুয়েক আগেও যার ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন গোটা কুষ্টিয়ায় হৈচৈ পরে যায়,সদর উপজেলার বাড়াদী এলাকার রাজুর স্ত্রী চায়না নাকি সাপ হয়ে গেছেন। বহু দূর দূরান্ত থেকে লোকজন মানুষ থেকে সাপ হয়ে যাওয়া চায়না খাতুনকে একনজর দেখতে হতদরিদ্র রাজুর বাড়ীতে ভীর জমাতে থাকে । এর পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি চায়না কবিরাজকে। মা মনোষার আশীর্বাদে নামী কবিরাজ বনে গেছেন তিনি। স্বাক্ষরতা জ্ঞান নেই,নেই সরকারী কোন অনুমোদন অথচ ক্যান্সার,প্যারালাইসিস,হার্টের সমস্যা সহ যে কোন জটিল ও কঠিন রোগের  চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তিনি। সেটাও আবার শুধু মাত্র ঝারফঁুক আর তাবিজ কবচের মাধ্যমে। কবিরাজি চিকিৎসা করে মাত্র দুবছরের মধ্যে ভাগ্য বদলেছে চায়না আর চায়নার পরিবারের লোকজনের।গোয়াল ভরা গরু,পাকা বসত বাড়ি, ধানী জমি,ব্যাংকে গচ্ছিত লক্ষ লক্ষ টাকা। কি নেই চায়না কবিরাজের এখন। জেলা শহরের চৌড়হাস শাহপাড়া এলাকার কথিত জ্বীনের বাদশা মিটাউলকে কে না চেনে। বছর দশেক আগেও যিনি একজন মাছ ব্যাবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি একদিন উপলব্ধি করতে সক্ষম হলেন  জ্বীন পরীদের  বশিভূত করার মত সক্ষমতা তার রয়েছে। এরপর দীর্ঘ সাধনার পর কয়েক শত জ্বীন আর পরীদের তিনি বশ করে তাদের দিয়ে এমন  কোন অসাধ্য কাজ নেই যা তিনি সাধন করছেন না। আপনি কি নিঃসন্তান,প্রেমে ব্যার্থ,চাকরি বাকরি কিংবা বিয়ে হচ্ছে না,ব্যাবসায় উন্নতি নেই,শত্রুকে পরাজিত করতে চান,ধনী হতে চান? সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে কথিত এ জ্বীনের বাদশার কাছে। এমনকি তিনি মৃত মানুষকে জীবিত করার মত অসাধ্যকে সাধন করতে পারে বলে কথিত রয়েছে। স্বর্পরানী চায়নার আদলে একই কায়দায় সপ্তাহে শনি মঙ্গল ও শুক্রবার এই তিন দিন রীতিমত চেম্বার খুলে জ্বীন পড়ীদের সাহায্যে ঝাড়ফুক ও তাবিজ কবজের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে জ্বীনের বাদশা মিটাউল। আর এমন অভিনব প্রতারনার মাধ্যমে রাতারাতী কোটিপতি বনে গেছেন তিনি।আলিশান বাড়ী,ব্যাংকে কাড়িকাড়ি টাকা সহ নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তথাকথিত এ জ্বীনের বাদশা। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খোর্দ আইলচারা মাঠপাড়া এলাকার একসময়ের হতদরিদ্র কৃষক নিমাই মন্ডলের স্ত্রী শুকজান বেগম। গত এক যুগ ধরে তার কাধে মা ফাতেমা (রাঃ),হযরত শাহ জালাল, এমনকি হিন্দু দেবী মা কালী সহ কালজয়ী মনীঋষীরা ভর করে আছে। যাদের সাহায্যে তিনিও সপ্তাহে তিনদিন তার চেম্বারে বসে নিঃসন্তান দম্পতিদেরকে সন্তান দান,মরন ব্যাধী ক্যান্সারের চিকিৎসা,শত্রুর উপর বিজয় লাভ করিয়ে দেওয়া, মনের মানুষকে কাছে পাইয়ে দেওয়া সহ একের পর এক অসাধ্য সাধনে ঝাড়ফুঁক আর তাবিজ কবচ দিয়ে চলেছেন। শুধুমাত্র শুকজান,স্বর্পরানী চায়না কিংবা মিটাউল নয়, বটতৈলের পুটি,ঝাউদিয়ার সাগর পাগলা সহ অন্তত অর্ধ শত কথিত জ্বীন পরীদের বাদশা রয়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলাতে। যারা কু সংস্কারচ্ছন্ন সাধারন  মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে পুজি করে নির্বিঘ্নে তাদের প্রতারনা চলিয়ে যাচ্ছে।  এদের ক্ষপ্পরে পরে একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছে সাধারন মানুষ অপর দিকে অপচিকিৎসার কবলে পরে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে তারা। অথচ এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারোই যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই। (চলবে…)