জেলা প্রশাসকদের নিয়ে গুঞ্জন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন করে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৩ জন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন যাদেরকে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারাই ২০২৩ সালের নির্বাচন পরিচালনা করবে, যদি নির্বাচন কমিশন তাদেরকে পরিবর্তন না করে।

পর্যায়ক্রমে সব জেলাতেই নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে এবং এ ব্যাপারে তারা কাজ করছে।

ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকদের একটি ফিট লিস্ট তৈরি করা হয়েছে, যে ফিট লিস্ট অনুযায়ী পর্যায়ক্রমিকভাবে অন্য জেলাগুলোতেও পরিবর্তন করা হবে।

ইতিমধ্যে যে সমস্ত জেলায় জেলা প্রশাসকদের চাকরির মেয়াদ ৩ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে সেগুলোকে এখন দ্রুত পরিবর্তন করার পরিকল্পনা নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

একটি নির্বাচনকে সামনে রেখে আগে থেকেই যেন জেলা প্রশাসকরা জেলার দায়িত্বে যান সে জন্য এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক।

সাধারণ নির্বাচনে জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। আর সে কারণেই নির্বাচনের মাত্র দু’বছর আগে নতুন করে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম গুঞ্জন চলছে।

তবে মজার ব্যাপার হল যে বিএনপি’র পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে কোনো রকম কথাবার্তা বলা হয়নি। এর কারণ হিসেবে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে এবার জেলা প্রশাসক নিয়োগ হচ্ছে ২৪তম বিসিএস এর কর্মকর্তাদেরকে। ২৪ তম বিসিএস এর নিয়োগ পেয়েছিল ২০০৫ সালে।

বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে এই বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং সে সময়ে এই বিসিএসে নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে নানারকম প্রশ্ন এবং বিতর্ক গণমাধ্যমে এসেছিল।

২০০৫ সালের বিসিএস পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছিলো তাদের ব্যাপারে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদারকি করা হয়েছিল এবং তদন্ত করা হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদেরকে শুরু থেকে বাদ দেওয়ার একটি নীরব প্রচেষ্টা ছিল বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়।

যদিও এখন এই ব্যাচের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে দাবি করেন। অনেকেই দাবি করেন যে তারা আওয়ামী লীগ পরিবারের থেকে এসেছেন কিন্তু সেই সময়ে বিসিএস নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যারা ছিলেন তারা আওয়ামী লীগের একজনও যেন সরকারি কর্মকর্তা না হতে পারে, একজনও যাতে বিসিএসে নিয়োগ না পায় সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রেখেছিলেন।

ওই ব্যাচের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওই নিয়োগ নিয়ে নানারকম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। যদিও এখন ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বলছেন যে তারা যথাযোগ্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এবং নিরপেক্ষভাবেই প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে নিয়োগ বাণিজ্য এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে বিতর্কিত করার একাধিক ঘটনার কথা সকলেই জানে। সাম্প্রতিক সময়ে ডিসি নিয়োগের পর পরই বিতর্ক উঠেছে।

সম্প্রতি নীলফামারীর জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া পর নাফিসা আফরিনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। তাকে ৫ জানুয়ারি ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

নিয়োগ দেওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে তিনি ছাত্রদলের নেত্রী ছিলেন এবং এটি পড়ে যাচাই-বাছাই করে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়।

শুধু একজন নয় ২০০৫ সালের নিয়োগ প্রাপ্ত ২৪ তম বিসিএসের অনেকেই বিএনপি এবং জামাত এর পরিচয় দিয়েই সরকারি চাকরিতে ঢুকেছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসে।

কাজেই জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ব্যাচের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে আরো বেশি সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত বলে সরকারের বিভিন্ন মহল দাবি করেছেন।

উল্লেখ্য যে বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সবসময় স্বচ্ছ ছিল কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় পাবলিক সার্ভিস কমিশন কেও কলুষিত করেছিল।

আর এই সময় হাওয়া ভবন থেকে তালিকার মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এই সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে যারা এখন জেলা প্রশাসক হচ্ছেন তাদের ব্যাপারে নিবিড় তদন্ত করা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।