বাজারে পেয়াজের ঝাজের চেয়ে দামের ঝাজ অনেক বেশি

এন এইচ শাওন,  আলমডাঙ্গাঃ
পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি বেড়েছে ৭ টাকা। আগামী এক মাস বাজারে পেঁয়াজের এই সংকট থাকবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, আগামী মার্চের শেষে বাজারে হালি পেঁয়াজ আসবে। তখন হয়তো দাম কমতে পারে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে তাদের বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দাম ছিল ৩৬-৩৮ টাকা।
গতকাল শুক্রবার তা পাইকারি বাজারেই বিক্রি হয়েছে ৪৩-৪৫ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৭ টাকা। আর গত সপ্তাহে শহরের বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫-৫০ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা।
পেঁয়াজচাষী জেলার খাসকররা গ্রামের আবদুল হাকিম বলেন, এ বছর পেঁয়াজ আবাদ করে অনেকেই চালান তুলতে পারেননি। কয়েক মাস আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ তাঁরা ১৮-২০ টাকায় বিক্রি করেছেন। বর্তমানে এই পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। আগামী মার্চের শেষের দিকে বাজারে নতুন হালি পেঁয়াজ উঠবে। তখন দাম সহনীয় হয়ে আসতে পারে বলে জানান তিনি।
আবদুল হাকিম আরও বলেন, এ বছর কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে নষ্ট হওয়ার ভয়ে অনেকেই জমি থেকে আগেভাগে পেঁয়াজ তুলেছেন। ফলে এই মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশি দিন ঘরে সংরক্ষণ করা যায় না। বর্তমানে তাদের ৯০ শতাংশ পেঁয়াজের মজুত শেষ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে দাম বাড়লেও কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। কারণ তাদের হাতে পেঁয়াজের মজুত নেই।
অন্য আরেক পেঁয়াজ চাষি জানান, পেঁয়াজ আবাদের ব্যবহৃত প্রায় প্রতিটি জিনিসের দামই বেশি। কীটনাশক থেকে শুরু করে বীজের দাম অনেক বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরি অনেক চড়া। বর্তমানে ৪০০-৪৫০ টাকার নিচে একজন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকেরা পেঁয়াজ-রসুন চাষে এগিয়ে আসবে না।
গত সপ্তাহের খুচরা বাজারগুলোতে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ টাকা।যা গতকাল মঙ্গলবার তা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়।আর এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৯ টাকা। যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৩ টাকায়।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে পেঁয়াজের মোট চাহিদা ২ লাখ মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদন হয় ২৯ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। সংরক্ষণের কারণে প্রসেস লস হয় ২৫ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রসেস লস হয় ৮-১০ শতাংশ। দেশে বছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬-৭ লাখ মেট্রিক টন। বাজার যাতে অস্বাভাবিক না বাড়ে সে জন্য সরকার টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে।
এ বিষয়ে সাধারণ ভোক্তারা বলেন,পণ্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় কিন্তু ঠিক আগের জায়গায় আছে।সামনে রমজান মাস আসছে,দিনে দিনে এ ভাবে বাজারে দাম বাড়তে থাকলে ক্রয় ক্ষমতা মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। এখনি সরকারে প্রয়োজন এ বিষয়ে যুগান্তকারি পদক্ষেপ গ্রহন করা।