জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি

মোঃ মাহাবুব আলম বিশেষ প্রতিবেদন:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের এ তারিখ ঘোষণা করেন।

সিইসি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর

নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ ধরা হয় প্রথম সভা থেকে পরের পাঁচ বছর। সেই হিসাবে বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি।

এ ছাড়া জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় চলমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে। অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে গত ১ নভেম্বর থেকে। আর ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা আছে আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আর ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি। এক্ষেত্রে প্রায় ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে। বাড়বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্য সংখ্যাও। এবার ভোটের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা।

সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র অনলাইনেও দাখিল করতে পারবেন। এজন্য অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম তৈরি করেছে ইসি। এ ছাড়া ভোটের তথ্য দিতে তৈরি করা হয়েছে স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি নামে একটি অ্যাপ, যা ইতোমধ্যে গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে।

এ অ্যাপের মাধ্যমে একজন ভোটার ঘরে বসে তার ভোটার নম্বর জানতে পারবেন। পাশাপাশি তার ভোটার এলাকা বা নির্বাচনী আসন, ভোটকেন্দ্রের নাম জানতে পারবেন এবং ভোটকেন্দ্রের ছবি, ভোটকেন্দ্রের ভৌগোলিক অবস্থান (ম্যাপসহ) দেখতে পাবেন।

এ ছাড়া অ্যাপের মাধ্যমে বিভাগওয়ারি বিভিন্ন আসনের তথ্য, যেমন- মোট ভোটার, মোট আসন, আসনের প্রার্থী, প্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্য (হলফনামা, আয়কর সম্পর্কিত তথ্য, নির্বাচনী ব্যয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের বিবরণী) জানতে পারবেন। অ্যাপটির মাধ্যমে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের তথ্য জানা যাবে এবং সমসাময়িক তথ্যাবলি ‘নোটিশ’ আকারে প্রদর্শিত হবে।

প্রার্থীর বিস্তারিত তথ্য থাকায় একদিকে তিনি যেমন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ভোটারের কাছে পৌঁছাতে পারবেন, অন্যদিকে ভোটাররাও তথ্য বিশ্লেষণ করে পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জ মো. আহসান হাবিব খান।

প্রার্থী হতে করণীয়:

মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীকে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সম পদাধিকারীর সইযুক্ত প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সইযুক্ত তালিকা। তবে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী আগের কোনো সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলে তাকে এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক তালিকা জমা দিতে হবে না।

সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের জামানত হিসেবে জমা দিতে ২০ হাজার টাকা এবং ছবিছাড়া ভোটার তালিকা সিডি (কমপ্যাক্ট ডিস্ক) কিনতে হবে ৫০০ টাকায়। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে হলফনামা জমা দিতে হবে, যেখানে থাকবে আটটি সুনির্দিষ্ট তথ্য। এ ছাড়া আয়ের উৎস, দায়-দেনা, সম্পদ বিবরণী ও আয়কর রিটার্নের কাগজপত্র জমা দিতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে রিটার্ন দাখিলের কাগজপত্র জমা দেওয়ার পাশাপাশি তার অনুলিপি ইসিকেও দিতে হবে।

নির্বাচনের প্রার্থীর ব্যয়সীমা হলো ২৫ লাখ টাকা। প্রার্থী বা তার এজেন্টকে একটি তফসিলি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ ব্যয় করতে হবে।

বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪টি। ইসি আয়োজিত সর্বশেষ সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপিসহ ১৮টি দল। তাদের অনেকেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। এক্ষেত্রে এবার সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেই মনে করছেন অনেকে।