জলাতঙ্ক নির্মূলে টিকাদান কার্যক্রম

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে গাজীপুরের কালীগঞ্জে ব্যাপকহারে কুকুরের টিকাদান (এসডিভি) ৩য় রাউন্ডের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের মাঝে জলাতঙ্ক নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (০১ জুন) সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া, কালীগঞ্জ পৌরসভার নব নির্বাচিত মেয়র এস.এম রবীন হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন আহমেদ, মাহবুবুর রহমান খান ফারুক মাস্টার, কালীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মোজাম্মেল হক, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ইসরাত জাহান, উপজেলা প্রাণী সম্পদ ভেটেনারী সার্জন আফজাল হোসেন, সাংবাদিক আব্দুর রহমান আরমান প্রমুখ। এ সময় জলাতঙ্ক নির্মূলের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিডিসি’র ডিজিএইচএস প্রকল্পের প্রোগ্রাম সুপার ভাইজার মো. রাসেল খন্দকার।

বক্তারা জানান, এ কার্যক্রম জেলার প্রতিটি উপজেলায় ১ম ও ২য় রাউন্ড শেষ আগামী ৪ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত চলবে ৩য় রাউন্ডের কাজ। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রতিটি ইউনিয়নে থাকবে ৩টি করে টিম এবং ১টি পৌরসভায় থাকবে ৫টি টিম। যার প্রতিটি স্থানে ৭০ ভাগের অধিক পোষা ও বেওয়ারিশ কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হবে। যা কুকুরের প্রতিটি হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করে এবং উক্ত এলাকাকে জলাতঙ্ক ঝুঁকি হ্রাস করবে। তবে প্রতিটি টিমে ৫ জন করে সদস্য কাজ করবে বলেও জানান তারা।

জানা গেছে, জলাতঙ্ক একটি ভয়ঙ্কর মরনব্যাধি, এ রোগে মৃত্যুর হার শতভাগ। পৃথিবীতে কোথাও কোথাও প্রতি ১০ মিনিটে একজন এবং প্রতি বছরে ৫৯ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে মারা যায়। জলাতঙ্ক রোগটি মূলত কুকুরের কামড় বা আচঁড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়াও বিড়াল, শিয়াল, বেজী ও বানরের কামড় বা আচঁড়ের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়াতে পারে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ মানুষ কুকুর, বিড়াল, শিয়ালের কামড় বা আচঁড়ের শিকার হয়ে থাকে, যাদের বেশির ভাগই শিশু। এছাড়াও প্রায় ২৫ হাজার গবাদি প্রাণী এ রোগের শিকার হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে ২০১০ সালের আগে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও এ রোগে গবাদি প্রাণীর মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায়নি। তবে একটি গবেষনায় দেখা গেছে এ রোগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবাদি প্রাণী মারা গেছে। ২০১৬ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শতকরা ৯০ ভাগ কমিয়ে আনা এবং ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্ক মুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং প্রাণীসম্পাদ মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল কর্মসূচী বাস্তবায়ন চলছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের প্রতিটি জেলায় ৬৭টি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। আর এসব কেন্দ্র থেকে কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজী ও বানরের কামড় বা আচঁড়ে আক্রান্তদের আধুনিক ব্যববস্থাপনায় বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত সবচেয়ে বড় জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র ‘‘সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল’’ এ প্রায় ৪-৫শ কুকুরে আক্রান্ত রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে ২০১১ সাল থেকে সারাদেশে ব্যাপক হারে কুকুরের টিকাদান কার্যক্রম চালু করা হয়। এ সকল কার্যক্রমের পাশাপাশি জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম ও দিবস উদাযাপনের মাধ্যমে অবহিতকরণ কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।

এ ছাড়াও অপরিকল্পিত কুকুর নিধন রোধ করার লক্ষ্যে পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বিভিন্ন সামাজিক আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন সেরকারী সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে বাংলাদেশে থেকে জলাতঙ্ক নিমূর্লের লক্ষ্যে এক সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তবে গত কয়েক বছরের গৃহিত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতার ফলে বাংলাদেশে জলাতঙ্কের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করেছে।

সংক্রামক হাসপাতালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১০ সাথ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সারাদেশে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১৪৭ জন থেকে ১ হাজার ৪৪৫ এ নেমে এসেছে এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালেও এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় প্রায় ৬০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমান চলমান এ সকল কার্যমের পাশাপাশি কুকুরের কামড়ের আধুনিক ব্যবস্থাপনা চালু রেখে ব্যাপক হারে কুকুরের টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে কুকুরের ৩ রাউন্ড টিকা প্রদান করা গেলে ইস্পিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণায়ল এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী ব্যাপকহারে কুকুরের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত দেশের সকল জেলায় প্রতিটি প্রতিটি উপজেলায় ১ম রাউন্ড এবং ১৬টি জেলার প্রতিটি উপজেলায় ২য় রাউন্ড এবং সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, মানিকগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলার প্রতিটি উপজেলায় ৩য় রাউন্ড টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ২০ লক্ষ ৫৮ হাজার কুকুরকে জলাতঙ্কের টিকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় প্রতিটি উপজেলায় আগামী ৪ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত ৩য় রাউন্ডের কাজ শুরু হবে।