জবিতে প্রকৃত মেধাবীই পেলেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকের মনোনয়ন

শেখ শাহরিয়ার হোসেন, জবি প্রতিনিধি:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৯’ এ মনোনয়নের জন্য কলা অনুষদ থেকে সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে একজন শিক্ষার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সব অনুষদে চূড়ান্ত ফলে সিজিপিএ পদ্ধতির ব্যবহার করা হলেও কলা অনুষদের প্রার্থী নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় নীতিমালা অনুসরণ করে বিশেষ সভার মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৯ এর নীতিমালায় যোগ্যতার দ্বিতীয় শর্তে বলা হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রথম স্থান অধিকারী শিক্ষার্থীগণের মধ্য হইতে ভর্তি পরীক্ষার নম্বর ও অর্জিত ডিগ্রির নম্বর যোগ করিয়া সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে প্রতি অনুষদ থেকে ১ (এক) জন অ্যাওয়ার্ডিকে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’-র জন্য মনোনয়ন দিতে হইবে। তৃতীয় শর্তে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ১০% (শতকরা ১০ নম্বর) যুক্ত করিয়া স্নাতক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলের ৯০% (শতকরা ৯০ নম্বর) যোগ করিয়া মনোনয়ন দিতে হইবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দুইজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ সিজিপিএ (৩.৮৬) প্রাপ্ত হোন। এর আগে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে ৭ ডিসেম্বর এক চিঠিতে (জরুরি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অথবা নম্বরধারী একজন শিক্ষার্থীর নাম পাঠানোর কথা বললেও, ২০ ডিসেম্বর ইউজিসিতে তথ্য পাঠানোর শেষ দিনের পূর্বের দিন ১৯ ডিসেম্বর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে একই সিজিপিএ ধারী দুইজন শিক্ষার্থীর নাম পাঠানো হয়।

তবে ভর্তি পরীক্ষার নম্বর খুঁজে না পাওয়ায় নিয়মানুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার শতকরা ১০ নম্বর যোগ না করেই শুধুমাত্র টিজিপিএ-র হিসাব করে একজনকে এই অনুষদ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়।

নীতিমালার ‘গ’ অংশ অনুযায়ী, চূড়ান্ত ফলের ৯০ শতাংশ নম্বরের (সিজিপিএ) সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ১০ শতাংশ যোগ করা হলে এগিয়ে যান অন্য এক শিক্ষার্থী।

পরবর্তীতে এ নিয়ে একই সিজিপিএ ধারী অন্য শিক্ষার্থী মনোনয়নের দাবি করে গত ২৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষকে আহবায়ক ও রেজিস্ট্রারকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির সভা সূত্রে জানা যায়, দুজনের একই ফল নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় উভয়ের সিজিপিএ নম্বর, টিজিপিএ, সব বর্ষের ফলের যোগফল ও সর্বশেষ ভগ্নাংশ প্রক্রিয়ায় তাদের ফল বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী পূর্বের মনোনীত শিক্ষার্থীর মনোনয়ন বহাল রাখা হয়।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে এম আক্তারুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ফল হয় সিজিপিএ’র ভিত্তিতে। আমার কাছে অনুষদের সর্বোচ্চ ফলাফলধারীর নাম ও ফল চাওয়া হয়েছে। আমি সেই তথ্য পাঠিয়েছি। কলা অনুষদ থেকে দুজনের সিজিপিএ সমান হওয়ায় আমি দুজনের নামই পাঠিয়েছিলাম। পরে এটা নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় আমাদের একটি সভা হয়। সভার মতামতের ভিত্তিতে আমরা এ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ ব্যাপারে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল অদুদ বলেন, সভায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে মূল নম্বরপত্র নিয়ে আসা হয়। আমরা সবকিছু মিলিয়ে দেখেছি। সিজিপিএ একই বা কম বেশি হলেও সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়ার জন্য আমরা সভায় সকলে সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছি।

কমিটির সদস্য সচিব রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দুই জনের সিজিপিএ একই হওয়ায় আমরা নীতিমালার ‘খ’ অংশ থেকে প্রাপ্ত শর্তানুসারে নম্বরের ভিত্তিতে মনোনয়ন দিয়েছি। সভায় সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সভায় আমি সিজিপিএ’র কথা উত্থাপন করেছি। বাকি অনুষদে যেহেতু সিজিপিএ’র ভিত্তিতে করা হয়েছে, এক্ষেত্রেও আমি তাই বলেছি। তবে সভায় বাকিদের সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত এসেছে।

আহবায়ক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা নীতিমালা নিয়ে সবাই বসেছি। দুই অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ অন্যরা ছিলেন। নীতিমালা মেনেই সবাই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক মনোনয়নের বিষয়টি দেখভাল করে ইউজিসির রিসার্চ সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিকেশন ডিভিশন। এ বিভাগের পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেন, আমরা চাই প্রকৃত মেধাবীরাই এ অ্যাওয়ার্ড পাক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, নীতিমালাও পাঠানো হয়েছে। সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের তালিকা পাঠাবে।