রুদ্র রাসেল, প্রতিবেদক, (চুয়াডাঙ্গা সদর): চুয়াডাঙ্গায় হঠাৎ করেই দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত চার দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৫২ জন রোগী।
আক্রান্তদের মধ্যে বয়ষ্ক নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও রয়েছে এ প্রকোপে। হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগী নিয়ে এমনিতেই চিকিৎসকরা অনেক ব্যস্ত, তার ওপর ডায়রিয়ার বাড়তি রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসক এবং সেবিকাদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে।
হাসপাতালে ডেঙ্গুর প্রকোপ শেষ হতে না হতেই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ায় রোগী ও চুয়াডাঙ্গাবাসীর মধ্যে বাড়তি আতংক দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডসহ, মেঝে, বারান্দা, চলাচলের পথ, এমনকি ট্রলি উঠানোর সিঁড়িতেও ডায়রিয়া রোগীতে ঠাসা। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে ব্যস্ত চিকিৎসক ও সেবিকারা।
আক্রান্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলাসহ চুয়াডাঙ্গার সকল উপজেলা থেকেই রোগী আসছেন হাসপাতালে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার একটি ছাত্রাবাসের কয়েকজন ছাত্রকেও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে দেখো গেছে।
সালমা খাতুন নামের এক মা বলেন, বাচ্চার হঠাৎ করেই জ্বর, খানিক পরপরই পায়খানা করছে। তাই রাতে হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাধীন শাহিন নামের একজন বলেন, গতকাল রেবাবার সকালে মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই তিনি পেটের পিড়ায় ভোগেন। ঘন ঘন পায়খানা হতে থাকে তার। উপায় না পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এসে ভর্তি হন তিনি।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে ২৭ শিশু, ৫৪ জন পুরুষ এবং ৫৯ জন নারীসহ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মোট ১৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে।
এর মধ্যে ৭১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছে। ওই ওয়ার্ডে ১০ জন রোগীর ধারণক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে ৭১ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছে। রোগীদের ওয়ার্ডে জায়গা না হওয়ায় ওয়ার্ডের প্রবেশ পথের সামনে, বারান্দায়, ট্রলি উঠানোর গড়ান শিড়িতে, হাসপাতলের করিডোরেও চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
এদিকে, হঠাৎ করেই মাত্রাতিরিক্ত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে খাবার স্যালাইন পর্যাপ্ত পরিমানে থাকলেও সংকট দেখা দিয়েছে কলেরা স্যালাইনের।
হাসপাতালের এই সংকট মোকাবেলাই, চুয়াডাঙ্গা চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ৭৫ ব্যাগ ,চুয়াডাঙ্গা জামান গ্রুপ ওব ইন্ড্রসট্রিজ ১০০ ব্যাগ কলেরা সেলাইন প্রদান করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট।
এবং রোগী কল্যান সমবায় সমিতি, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কে নগত ১ লক্ষ টাকা প্রদান করেন এই ডায়রিয়ার প্রকোপ মোকাবেলার জন্য।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবির বলেন, ‘হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার, দুষিত পানি খাবার পান, পানি শূন্যতা, খাবার পূর্বে হাত না ধুয়ে খাওয়ার কারণেই অতিরিক্ত মাত্রায় মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে পরছে।
তিনি আরোও বলেন, ডায়রিয়া এড়াতে সর্বদা নলকুপের বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে হবে। অন্যথায় পানি ৩০ মিনিট ফুটিয়ে পান করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর বা বাইরের খোলা খাবার পরিহার করতে হবে।
শিশুদের প্রতি জতœবান হতে হবে এবং তাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। খাবারের আগে ও পরে সাবান দিয়ে ভালোকরে হাত ধুতে হবে। আতঙ্কীত না হয়ে সচেতন থেকে ডায়রিয়ার হাত হতে রক্ষা পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।’
বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়া মোকাবেলাই কলেরা স্যালাইন, খাবার স্যালাইন পর্যাপ্ত পরিমানে মজুত আছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ এস এম মারুফ হাসান জানান, হাসপাতালে হঠাত করেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ড ছাপিয়ে হাসপাতালের বারান্দা, শিরির নিচ, করিডোর, হাসপাতালের ভিতর চলাচলের সকল জায়গাতেও ডায়রিয়া রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে।
ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চুয়াডাঙ্গার নানান এলাকা থেকে এসে ভর্তি হয়েছে। কোন এক এলাকার একাধিক আক্রান্ত না হওয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ নিদৃষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার, পানি শূন্যতা, বৃষ্টি, ভ্যাপসা গরম ইত্যাদি কারণে এ সময় সাধারণত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
সরকারি কলেরা স্যালাইন ফুরিয়ে গেলেও আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধ, খাবার স্যালাইন, কিছু কলেরা স্যালাইন মজুত আছে। সংকট মোকাবেলাই কলেরা স্যালাইনের অর্ডার দেয়া হয়েছে। আজ সোমবার তা হাসপাতারে এসে পৌছোবে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রোগীদের অনেকের অবস্থা অনেকটা ভালো, বাকিরা অসুস্থ থাকলেও কারো অবস্থাই আশঙ্কা জনক নয়। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
তবে ৫০ শয্যার জনবলে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে সাধারণ দিনে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমিশিম খেতে হয় হাসপাতালের চিকিৎসক এবং সেবিকাদের। সেখানে মাত্রাতিরিক্ত ডায়রিয়া রোগী ভর্তি থাকার কারনে চিকিৎসক এবং সেবিকাদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।