চুয়াডাঙ্গার গনহত্যা ওপর রচিত নাটক “লালব্রিজ অতঃপর” মঞ্চস্থ আলমডাঙ্গার বধ্যভূমিতে

এন এইচ শাওন আলমডাঙ্গা প্রতিনিধি ঃ

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার বধ্যভূমিতে চুয়াডাঙ্গা জেলার গণহত্যার ওপর রচিত নাটক ‘লালব্রিজ অতঃপর’ মঞ্চস্থ হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমি এ নাটক মঞ্চস্থ করে। নাটক শুরুর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুন বলেন, ‘স্বাধীনতার ইতিহাস শুরু করলে অনেক সময় লেগে যাবে। শুধু এতটুকুই বলব, আমরা স্বাধীনতার চেতনা বুকে ধারণ করি। এই জায়গাটা বধ্যভূমি। কিসের জন্য আমরা এই জায়গাটা সংরক্ষণ করেছি, এতো সুন্দর জায়গা হিসেবে গড়ে তোলার মনস্কামনা তৈরি হয়েছে।

এই জায়গায় হাজার হাজার মানুষকে ট্রেন থেকে নামিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মা-বোনদের ধরে এনে তাদের ওপর অত্যাচার করে হত্যা করা হয়েছে। এই আলমডাঙ্গার আশেপাশের যারা মুক্তিযুদ্ধের শক্তি ছিল, তাদের আত্মীয়-স্বজনদের ধরে এনে হত্যা করা হয়েছে। তাই এই বধ্যভূমি আলমডাঙ্গাবাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এমন বধ্যভূমি সারা দেশে অনেক আছে। চুয়াডাঙ্গার আশেপাশেও এমন ছোট-বড় অনেক বধ্যভূমি ছিল। সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা।’

নাটক মঞ্চায়ন শেষে নাটকের ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার আরও বলেন, ‘আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে আমাদের আগামী প্রজন্ম বঞ্চিত হবে। আজ চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে যে নাটক মঞ্চায়িত হলো, আমরা মহিত হয়ে পড়েছিলাম। বারবার আমি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ফিরে যাচ্ছিলাম।

এই নাটকে চুয়াডাঙ্গা জেলার তৎকালীন ঘটনা এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে, মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। আজ নাটকে এরা সত্যিকারের ইতিহাস তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। যারা এই নাটকের শিল্পী, কলা- কৌশলী, নির্দেশক সকলকে অভিনন্দন।’

সভাপতির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমরা এই নাটকের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে যে ঘটনা ঘটেছিল, সেই ঘটনা অনেকটা আঁচ করতে পারব। আমরা যারা এখানে আছি, অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ দেখি নাই। অনেকের কাছ থেকে শুনেছি, বই পড়ে জেনেছি, সিনেমা-নাটক দেখে জেনেছি, পত্র-পত্রিকা পড়ে জেনেছি। আমাদের জন্য বড় একটা সুযোগ একেবারে সামনে থেকে পরিবেশ থিয়েটার দেখার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ তিন মাস ধরে শিল্পীরা যে শ্রম দিয়েছে, তা আজ সফলতা লাভ করেছে। আমরা নাটক দেখলাম, যেন ছবির মতো মনে হচ্ছিল।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি স্যার এখানে বধ্যভূমি তৈরি করেছেন। এখান থেকে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান পিএসসি, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রনি আলম নুর ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য শাহান আলী, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদক আব্দুল মান্নান, সংলাপ থিয়েটারের নজির উদ্দিন, কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, নাটকের নির্দেশক আব্দুস সালাম সৈকত, শিল্পকলার সদস্য ও নাটকের সাথে জড়িত প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি শাহ আলম সনি, আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, সম্পাদক মতিয়ার রহমান, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. সালমুন আহম্মেদ ডন, সরকারি কলেজের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, নাট্য ব্যত্তিত্ব আদিল হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমি বাস্তবায়নে ও বজলুর রহমান জোয়ার্দ্দারের রচনা, আব্দুস সালাম সৈকত ও সাজ্জাদ হোসেন এই নাটকের নির্দেশনা প্রদান করেন।