চুয়াডাঙ্গার উন্নয়নে ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুল হকের ঘোষণা, প্রেসক্লাবে সংবর্ধনা

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করছেন চুয়াডাঙ্গার কৃতি সন্তান ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আর্থ মুভিং সলিউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান ইঞ্জিনিয়ার মো. মুজিবুল হক বলেছেন, ‘শিশুকালে পিতার দিকনির্দেশনা পেয়েছি। শিক্ষকদের পরামর্শ পেয়ে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। যখন লেখাপড়া করেছি, তখন থেকেই এ স্বপ্ন জিইয়ে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে যারা দায়িত্বপালন করেন, তাঁদেরকে সবসময়ই আমি সহকর্মী হিসেবেই দেখি। সহকর্মীরাও প্রতিষ্ঠানকে নিজের মতো করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যার সাথে এক দিনের জন্য পরিচয় হয়েছে, তাঁকেও আপন বলে ভাবি। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব আমাকে সংবর্ধিত করে আজ থেকে যেভাবে আরো নিজেদের করে নিলো, তা কখনই ভুলব না। সবসময় প্রেসক্লাবের পাশে থাকব। চুয়াডাঙ্গার উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, ‘সৎ ও সততার সাথে দেশ এবং দশের জন্য ভালো কিছু করার প্রবল ইচ্ছে ছিল। এ ইচ্ছে পূরণের জন্যই ১২ বছর সরকারি চাকরি করে পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছি। সহকর্মীসহ সর্বস্তরের সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতায় উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতাও পেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, তার স্বপ্ন দিয়ে গড়া আর্থ মুভিং সলিউশন লিমিটেড সহ ৮টির মতো প্রতিষ্ঠান দেশে সুনামের সাথে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে নিজের জেলা চুয়াডাঙ্গাতেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের জোগান দেওয়ার মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন রয়েছে।

২৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইঞ্জিনিয়ার মো. মুজিবুল হক নিজের পরিচয়ও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুরের আহম্মেদ আলী বিশ্বাস ও মোছা. রাফিয়া খাতুনের সন্তান আমি। রামনগর-কলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে কুষ্টিয়া থেকে এইচএসসি। এরপর রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ। এরপর সরকারি চাকরি। মনে ছিল দেশ ও দশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে। ভাই এনামুল হক লোটাস, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। রয়েল পরিবহনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। লোটাস ও সালাউদ্দীন ভাই আমার অভিভাবকতুল্য।

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি। ক্লাবের সহসাধারণ সম্পাদক ইসলাম রকিবের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠান শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমেদ শরীফ সজিব, চুয়াডাঙ্গার চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি শাহরীন হক মালিক, আর্থ মুভিং সলিউশন লিমিটেডের সিইও খান মঞ্জুর মোরশেদ, আর্থ মুভিং সলিউশন লিমিটেডের ইমরুল কায়েশ, এক্সকিউটিভ ডিরেক্টর এ কে এম শফিকুর রহমান, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার ওয়াহিদুজ্জান রোকন, ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির, পরিচালক মো. কামরুল হাসান কপোত, হেড অব ব্রান্ডিং তাজবীর আহমেদ অনিক, লজিস্টিক অফিসার ফিরোজ হোসেন ও আরটিভির সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার জুলহাস কবির সুজন।

সংবর্ধিত অতিথিসহ বিশেষ অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করেন ক্লাব সদস্যরা। দেশের সফল উদ্যোক্তা প্রকৌশলী মো. মুজিবুল হকের কর্মজীবনের ওপর প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের নবনির্বাচিত সভাপতি ও দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খ. শাহ আলম মণ্টু, জীবননগর প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বাবু, দামুড়হুদা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. নুরুন্নবী, দর্শনা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।

সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যের আগেই তাঁকে সম্মাননা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এসময় তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সংবর্ধিত করার মধ্যদিয়ে যে সম্মান দিলো, তা নিয়ে মনে হচ্ছে এলাকার ওপর আরও দায়িত্ব বেড়ে গেল। কারণ, যেকোনো কাজের স্বীকৃতি মানুষকে উৎসাহিত করে। চুয়াডাঙ্গার সন্তান হিসেবে চুয়াডাঙ্গার মানুষের প্রতি সবসময়ই বিশেষ দৃষ্টি থাকে। সামাজিক উন্নয়নে যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে আরও বেশি বেশি করার ইচ্ছে রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের তহবিল সমৃদ্ধ করার লক্ষে তিনি তাৎক্ষণিক অর্থও প্রদান করেন।

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি স্বাগত বক্তব্যে প্রেসক্লাব সম্পর্কে যেমন ধারণা তুলে ধরেন, তেমনই তিনি সংবর্ধিত অতিথিকে প্রেসক্লাবের পাশে পাওয়া গর্ববোধও করেন। বলেন, চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুল হক দেশে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি তাঁর কর্মের মধ্যদিয়ে বুঝিয়েছেন লেখাপড়া শুধু গদবাধা চাকরির জন্য নয়। চাকরি দেওয়ার মতো ক্ষেত্রও তৈরি করা যায়।

সমাপনী বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল আমিন বলেন, ‘একজন সফল মানুষকে কাছে পেয়ে তাঁর বড় হওয়ার গল্প শুনে আমরা গর্বিত। প্রেসক্লাবের তহবিলে সমৃদ্ধ করার ঘোষণা দিয়ে তিনি যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, এ জন্য চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবও ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুল হককে আজীবন দাতা সদস্য পদ প্রদান করে আমাদের পরিবারভুক্ত করে আমরাও ধন্য, গর্বিত।’