চলনবিলে ফুটে থাকা লিচুর ফুল মৌ মাছিকে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছে 

মোক্তার হোসেন, চলনবিল প্রতিনিধিঃ বসন্ত মানেই যেন ফুলের এক ছড়াছডি কান্ড। গাছে গাছে এসেছে লিচুর মুকুল। বাগানে ফুটে থাকা লিচুর ফুল যেন মৌ মাছিকে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছে । লিচু সুস্বাদু ও রসালো ফল হিসাবে যেমন কদর রয়েছে তেমনি এটিতে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমুহ, ফ্ল্যাভোনিয়েড ইত্যাদি উৎস রয়েছে।

লিচুর আদি নিবাস চিনে হলেও বাংলাদেশেরও সব স্থানেই স্বল্প মাত্রায় লিচুর চাষ হয়।  উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে এর ভাল ফলন হয়। আবার চলনবিলে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ,পাবনার ঈশ্বরদী, রূপপুরেও লিচুর চাষ হয়। বাংলাদেশের মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু বড় আকার ও সুস্বাদের জন্য বিশেষ জনপ্রিয়।আমের পাশাপাশি লিচুর মুকুল।  ডালে ডালে কচি পাতা ভেদ করে আসতে শুরু করেছে সোনালী মকুলগুলো যেন উজ্জল রোদের মতই হাসছে।লিচুর মকুল শুধু গাছেই ছেয়ে যায়নি, ছুঁয়ে গেছে চাষীদের হৃদয়ও। নতুন বাগান তৈরী,পরিচর্যা আর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বাড়ছে লিচুর উৎপাদন।

লিচু গুলোতে ফাল্গুন মাসের প্রথম দিক থেকেই প্রচুর কুঁড়ি এবং মুকুলের সমারোহ হয়। গোটা লিচুবাগানের গাছগুলো মুকুলে মুকুলে ভরে গিয়েছে। এবার লিচুর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। লিচু পূর্ণাঙ্গ ফলে রুপ নেয় কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করে। প্রথমে মুকুল, মুকুল থেকে ফুল, ফুল থেকে গুটি এবং গুটি বড় হয়ে লিচু ফলে রুপ নেয়।

প্রতিটি পর্যায়েই লিচু গাছের বালাই ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব দেয়া প্রয়ো জন। তবে মুকুল আসার আগে এবং পড়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কেননা, মুকুল ঝরে পড়েই লিচুর উৎপাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়।

গান্ধিপোকা লিচু গাছের একটি ক্ষতিকর পোকা।  এ পোকার স্ত্রী পোকাগুলো পাতার নিচের দিকে গোলাকার ফ্যাকাসে গোলাপি বর্ণের ১০-১২টি ডিম গুচ্ছ আকারে পড়ে থাকে। ডিম, নিম্ফ (বাচ্চা কীড়া) ও পূর্ণাঙ্গ পোকা এ তিনটি স্তরে লিচুর গান্ধিপোকা জীবনচক্র সম্পন্ন করে। নিম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ পোকা রস চুষে খেয়ে লিচু গাছের ক্ষতি করে থাকে।

চলতি বছর লক্ষাধিক গাছে লিচুর মুকুল এসেছে। ফাল্গুণ মাসের শুরুর প্রথম থেকেই লিচুর উৎপাদনের জন্য অনুকুল আবহাওয়া রয়েছে বলে লিচু চাষী ও বাগান ব্যবসায়ীরা জানান। পুরনো লিচু বাগানের পাশাপাশি ফসলের আবাদী জমিতেও এবার অনেক উদ্যোক্তা লিচুবাগান তৈরি করেছেন। এককভাবে লিচুবাগান তৈরি ছাড়াও অনেক কৃষক আবাদি জমিতে ফসল হিসাবে লিচু গাছ লাগিয়েছেন। লিচুর কয়েকটি জাত যেমন -বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি  এবং দেশী লিচুর মুকুল ফুটতে দেখা যাচ্ছে।
লিচুচাষী ও লিচুবাগানের মালিকরা রুটিন মাফিক লিচু গাছের পরিচর্যা সহ কীটনাশক স্প্রে করে লিচু উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফুটপাম্প এবং পাওয়ারপাম্প দিয়ে  লিচু গাছে  স্প্রে চলছে।  এরোকম চিত্র দেখা যাচ্ছে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায়। লিচু চাষীরা জানান, চলতি বছর লিচুর ফলন গত বছরের ফলনকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে।