চট্টগ্রাম বিভাগে নিষিদ্ধ পলিথিনের জমজমাট ব্যবসা চৌমুহনীর সার্টিহাট

নিজস্ব প্রতিনিধি নোয়াখালী: চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশী নিষিদ্ধ পলিথিনের জমজমাট ব্যবসা চলছে চৌমুহনীর সার্টিহাটায়। সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন মহলকে চৌমুহনী সার্টিহাটার খুচরা ব্যবসায়ী ক্যাশিয়ার সেজে বিভিন্ন দোকান থেকে প্রতিদিন টাকা উত্তোলন করে মাসিক বখরার মাধ্যমে বিভিন্ন পোশাকী ও সিভিল বিভাগকে ম্যানেজ করে চলছে এ নিষিদ্ধঘোষিত অবৈধ পলিথিনের এই বাজার। এ বাজার থেকে প্রতিদিন পিকআপ, ট্রাক, ট্রেম্পু ও সিএনজি যোগে লক্ষীপুর, রায়পুর, কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর, রামগঞ্জ, নাঙ্গলকোর্ট, শাহরাস্তি, হাজিগঞ্জ, মনপুরা, ভোলা, বরিশাল, উড়িরচর, হাতিয়া, সুবর্ণচর, সদর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, দাগনভূঞা, বসুরহাট, ফেনী, মিরসরাই, জোরালগঞ্জসহ আশপাশের গ্রাম-গঞ্জের ছোট-বড় বাজারগুলোতে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছে।

এতে পাট শিল্প হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়াও বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী শহর ও বেগমগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরীতে ১৪টি কারখানায় ২৮টন নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন হওয়ার ফলে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ায় স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ চলছে। এলাকাবাসী জানায়, গ্রেটার নোয়াখালীর রাজধানী খ্যাত চৌমুহনী বাজারের চাটিহাটা জুড়ে নিষিদ্ধ পলিথিনের বাজার প্রকাশ্যে রমরমা চলায় চাঁদা বাজদের এখন পোয়াবারো। এইখানে ৯ উপজেলার পলিথিন ব্যবসায়ীরা শনি ও মঙ্গলবার বাজারের তারিখে ট্রাকে ট্রাকে মাল ক্রয় করে গ্রামে গঞ্জে পাঠিয়ে দেন। খুচরা ফড়িয়ারা বাজার তারিখ ছাড়া প্রতিদিন চালান করছে পৌর মার্কেট চাটিহাটা থেকে। থানা পুলিশের ক্যাশিয়ার ও বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেন চাটিহাটার একজন মূখচেনা সিভিল ক্যাশিয়ার। লাখ লাখ টাকার লেনদেনের পর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হাতিয়ে নিচ্ছে চাটিহাটার পলিথিনের সেন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখাযায়, বেগমগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরী ও চৌমুহনী শহরের ভাই ভাই প্লাষ্টিক, তানিয়া প্লাষ্টিক, মদিনা প্যাকেজিং, হেলাল প্যাকেজিং, আল হেরা প্যাকেজিং, ড্রিম প্যাকেজিং, এস.কে প্যাকেজিং, আলিফ প্রিন্টিং প্যাকেজিং সহ ১৪টি কারখানায় প্রতিদিন ২৮টন নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া ৫জন ব্যক্তিগত ভাবে ঢাকা থেকে সরাসরি এনে বিক্রি ও বাজারজাত করছে। প্রতিদিন সকালে চৌমুহনী পৌরসভার বর্জ্য সরানো গাড়ী প্রধান প্রধান সড়কের ময়লা পরিষ্কার করে তফাদার পোল সংলগ্ন হাইওয়ে সড়কের পাশে ফেলে থাকে। এসমস্ত ময়লায় কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ফেলার চেষ্টা করলেও বৃষ্টি হলে দুর্গন্ধে যানবাহনের যাত্রী ও এলাকার লোকজন দারুন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

পৌরসভার বহু অলি গলিতে যত্রতত্র পলিথিন পড়ে থাকে এবং বৃষ্টি হলে ড্রেনে পড়ে পানি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেখা যায়। এব্যাপারে নোয়াখালী-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মামুনুর রশিদ কিরন বলেন  মোটা পলিথিন উৎপাদন কারখানা গুলোর পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে। কিন্তু চিকন পলিথিন উৎপাদন কারখানার অনুমতি নেই। ঢালাওভাবে প্রচার করলে আইন সম্মত হবে না। তবে কয়টি কারখানার পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র আছে তিনি জানেন না বলে জানান। বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার সামছুন নাহার বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাত করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি লাগে। বিষয়টি যেহেতু নজরে এসেছে সেহেতু পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে সকল কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সঠিক কাগজ পত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেগমগঞ্জ পলিথিন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিজামুল আজিম মামুন বলেন, মোটা বা চিকন পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাত করলে মানুষের কাজে লাগে এতে কারো কিছু করা বা বলা সমুচিন নয়। আমরা প্রশাসন সহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে থাকি। সাধারন সম্পাদক মোঃ হোসেন মিয়া বলেন, কোন ঝড়-ঝাপটা আসলে কারখানাগুলোর মালিক, ৩৫ জন ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিগত ৫ জন থেকে মাসিক যে ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উঠে তম্মধ্যে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যায়। বাকি টাকা আমাদের সমিতির তহবিলে জমা থাকে। বড় ধরনের বিপদ আসলে যেন সাথে সাথে বখরা দিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করতে পারি। এ ব্যপারে সচেতন মহল পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে অভিযান চালানোর জোর দাবি জানান।