চট্টগ্রামের পাথরঘাটা ট্রাজেডিতে লোহাগাড়ার রিক্সাচালক মাহমুদুল নিহত মায়ের আহাজারী

অমিত কর্মকার, লোহাগাড়া প্রতিনিধি : গতকাল সোমবার রাত ৭টায় লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের তেইল্যাকাটা সেনেরচর এলাকায় নিহত মাহমুদুল হকের গ্রামের বাড়ীতে গেলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় এ্যাম্বুলেন্সযোগে তাঁর লাশ বাড়ীতে পৌঁছলে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে,মা, বাবা,ভাই-বোনসহ আতœীয়-স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। এসময় শত শত এলাকাবাসী একনজরে তাঁর লাশ দেখার জন্য ভিড় জমাতে দেখা গেছে। কান্নায় বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন তাঁর মা মমতাজ বেগম ও স্ত্রী শাহিন আক্তার।
চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় গত ১৭ নভেম্বর রোববার গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণে নিহত সাতজনের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় ওইদিনই মিলেছিল। বাকি ছিল শুধু একজন। অবশেষে অজ্ঞাত লাশটিরও সন্ধান মিলেছে। গত রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে পড়ে থাকা লোকটির নাম মাহমুদুল হক (৩০)। চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া ভেড়া মার্কেটের বেলাল কলোনিতে থাকতেন। তিনি পেশায় ছিলেন একজন রিক্সাচালক। তিনি ৫ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় এবং ৩ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ মহসিন জানান, রবিবার সকালে বিস্ফোরণের ঘটনার পর নিহত সাতজনের মধ্যে চারজনের সন্ধান পাওয়া গেলেও বাকি তিনজনের পরিচয় জানা যায়নি। বিকাল নাগাদ আরও দুজনের পরিচয় মিললেও মাহমুদুলের খোঁজে কেউ আসেনি। রাত সাড়ে নয়টার দিকে তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম খুঁজতে আসলে বিস্ফোরণ ট্রাজেডির সর্বশেষ মৃতদেহটিরও পরিচয় জানা যায়। এই ঘটনায় নিহত সকলেই ছিল পথচারী। কেউ স্কুলে, কেউ কাজে আর কেউ তাদের বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। প্রতিদিনের মতো জীবন চলার তাগিদে সবাই বেরিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
এ সময় নিহত মো: মাহামুদুল হকের মা মমতাজ বেগম কান্নাকাটি করতে করতে জানান, ছেলে মাহমুদুল হক বিগত ২ মাস আগে মহরমের ফাতেহার পর বাড়ি থেকে শহরে যায়। সে ৬ মাস ধরে চট্টগ্রাম শহরে রিক্সা চালায়। তার ৩ ছেলে ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে। সে কোষ্ট নামের একটি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণও নিয়েছিল। এখন তাঁর অকাল মৃত্যুতে পরিবার নি:স্ব হয়ে গেল। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে কিভাবে সংসার চলবে?

মাহমুদুল হকের ছোট ভাই রিক্সা চালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাহমুদুল হক চামড়া গুদামের মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে গীর্জাস্কুলে যাচ্ছিল। ওই সময় আমিও জেইল্যা পাড়া রোড দিয়ে গীর্জাস্কুলের সামনে যাত্রী নামিয়ে আরেক যাত্রী নিয়ে আগ্রাবাদের দিকে যাচ্ছিলাম। পরে ফারুক কোম্পানীর মাধ্যমে জানতে পারি বড়ভাই মাহমুদুল হক চকবাজার মেডিকেলে গুরতর আহতাবস্থায় ভর্তি আছে। অনেক খোঁজাখুজির পর মেডিকেলের অফিসে গিয়ে জানতে পারি সেখানে একটি অজ্ঞাত লাশ পড়ে আছে। আমি গিয়েই আমার ভাইয়ের লাশ সনাক্ত করি।