ঘোড়াঘাটে দুই লক্ষ টাকা দিয়ে শুরু এখন দুই কোটি টাকার সফল খামারি ন্যাচার ফ্রেস ডেইরি ফার্ম

মনোয়ার বাবু, (ঘোড়াঘাট) দিনাজপুর প্রতিনিধি : ন্যাচার ফ্রেস ডেইরি ফার্ম।সোহেল,পারভেজ এবং শাহনেওয়াজ তিন ভাই এখন অত্র কয়েক থানার মধ্যে গরু পালনের তরুণ উদ্যোক্তা। আজ থেকে আট বছর আগে ২০১৩ সালের দিকে শখের বসে মাত্র দুই লক্ষ টাকায় ২টি ফ্রিজিয়ান গরু দিয়ে শুরু করেছিলেন। আজ তাদের চার টি সেডে ৭০ টিরও অধিক গরুর এক বিশাল খামার।

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বড় গলির মেলার বাগান সংলগ্ন নিজস্ব বাড়ির শানবাঁধানো পুকুর পাড়ের উপর এই খামার টি তৈরী করা হয়েছে। প্রায় ৭০টি উন্নত জাতের গাভি রয়েছে এ খামারে। সারি সারি গরুর যত্নের কোন কমতি নেই।সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছেন ১০টি শ্রমিক।যাদের প্রত্যেক কে মাসিক বেতন ১০-১২ হাজার টাকা করে দিতে হয়। বিদ্যুৎ,পানি, বাতাসের জন্য ব্যবহার হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। কংক্রিটের ড্রেনে পয়ঃনিষ্কাশন হচ্ছে মুহূর্তেই। খাবার, চিকিৎসায় জোর ব্যবস্থা।

সরেজমিন দেখা যায়,ন্যাচার ফ্রেস ডেইরি ফার্ম চার টি সেডে ভাগ করা হয়েছে।খামারে ঢুকতেই প্রথম সেডে বিশাল এক দানব আকারের গরু, ওজন ১২০০ কেজি।যার নাম রাখা হয়েছে দিনাজপুরের বস। দ্বিতীয় সেডে যেকোন সময় বাচ্চা দেবে এমনি গরু,তৃতীয় সেডে সাত আট মাস বয়সের বাচ্চা গরু এবং ৪র্থ সেডে সারি সারি দুগ্ধজাত বিশাল বিশাল গরু বাঁধা। নিচেও পাকা করা। একটি গরু থেকে আরেকটি গরুর নিরাপদ দূরুত্বে বাঁধা। আরামদায়ক বিছানার জন্য ম্যাট পাতা। মাথার ওপরে ফ্যান সহ পানির লাইন। তাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য টিনের সাথে বিশেষ কায়দায় ছাউনি দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মতিনুর রহমান মতিন বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকলে জীবনে সফলতা আসে,ন্যাচার ফ্রেস ডেইরি ফার্ম তার উদাহরণ।’যে কোন সমস্যা আমাদের অবহিত করার সাথে সাথে আমরা শরীরে এসে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করি এবং পরামর্শ দিয়ে থাকি।

ন্যাচার ফ্রেস ডেইরি ফার্ম এর স্বত্বাধিকারী শাহনেওয়াজ বলেন,আমাদের খামারে এবার দিনাজপুরের বস নামে যে ষাঁড় গরুটি আছে, তার বয়স চার বছর এবং ওজন ১২০০ কেজি। এবারের ঈদে দিনাজপুরের বসকে বাজার জাত করা হবে।গরুটির দাম বার লক্ষ টাকা চাওয়া হলে এখন পর্যন্ত নয় লক্ষ টাকা দাম উঠেছে বলেও তিনি জানান।

তিনি আরও জানান,দুই টি গরু দিয়ে শুরু করে ছিলাম এখন তা ৭০ টিরও বেশী হয়ে গেছে।দুগ্ধজাত গরু থেকে প্রতিদিন দুই শত লিটারের মত দুধ পাওয়া যায় এবং বর্তমানে তিন মাস পরপর দশটি গাভি বাচ্চা দিচ্ছে বলেও জানান। এখন বাৎসরিক আনুমানিক পঁচিশ লক্ষও বেশী আয় এবং দুই কোটি টাকার মত গরু আছে বলে তিনি জানান।গরুর খাবার নিয়ে তিনি বললেন, ‘প্রতিদিন কাঁচা ঘাস, খড়, ভুসি, ভুট্টা, খৈল খাওয়াই।নিজের জমিতে উন্নত জাতের ঘাস নিজেই চাষ করি। বাজার থেকে খাবার বেশি কিছু কিনতে হয় না। এ জন্য গরুগুলোর স্বাস্থ্যঝুঁকি কম।’

শাহনেওয়াজ সাহেবের বড় ভাই পারভেজ বলেন,খামার করার পর থেকে আজ পর্যন্ত বড় ধরনের তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তবে বর্তমান এই খামার দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে অনেক লোক জন আসছে এবং খামারের গরু সহ দুধ বাজারজাত করার জন্য যে রাস্তা ব্যবহার হচ্ছে তা মেয়র মহোদয়ের এর সহযোগীতায় পাকা করা হলেও বাকী রাস্তার জায়গার অংশীদার জটিলতায় কিছু অংশ এখনো বাকি আছে আর দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হলে রাস্তা দিয়ে ৪৫ টি পরিবারের অন্তত ২০০ জন লোকের চলাচলের সুবিধা সহ অন্যান্য সকল সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

সেই সাথে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বেকারত্ব দূর করতে হাতিয়ার হতে পারে গরুর খামার।তাই বেকারত্ব দূর করতে হলে নিজ উদ্দ্যোগে গরু খামার করার জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করেন।