গ্যাস চুরি ও কোম্পানিগুলোর লাভের পরও কেন দাম বৃদ্ধি?

বিশেষ প্রতিনিধি : গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রায় সবাই লাভ করছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে কয়েক দফা বোনাস নিচ্ছে। ডিভিডেন্ড দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। দুর্নীতি কমছে না। গ্যাস চুরি হচ্ছে। প্রকৃত গ্রাহকরা ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছে না। মাস শেষে ঠিকই বিল দিতে হচ্ছে। এখন আবারও দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। মান সম্মত গ্যাসের সরবরাহ না পেলে ভোক্তারা কেনো বাড়তি দাম দেবে? কর্মকর্তারা নিজেদের দুর্নীতি পোষাতেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

গতকাল বুধবার গ্যাসের প্রস্তাবিত মূল্য বাড়ানোর আবেদনের তৃতীয় দিনের শুনানিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। কাওরান বাজারের টিসিবি অডিটোরিয়ামে গতকাল সকালে বাখরাবাদ এবং বিকেলে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম এবং সদস্য মিজানুর রহমান, মাহমদুউল হক ভুইয়া, রহমান মুর্শেদ ও আব্দুল আজিজ খান উপস্থিত ছিলেন।

বাখরাবাদের শুনানিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি বলেন, এপ্রিল থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আসবে বলা হচ্ছে। পাইপলাইনের কাজই শেষ হয়নি। গ্যাস আসবে কেমন করে? তিনি বলেন, বিতরণ সংস্থাগুলো নিজেরা অন্য কোম্পানিকে ঋণ দিয়েছে। এটা কোন নীতিতে দিয়েছে তারা? তারা কি ব্যবসা করতে এসেছে?

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আবাসিকে মিটার না দিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। তার দাবি, মিটার যুক্ত গ্রাহকের ৩০০/৪০০ টাকা বিল আসে। অথচ মিটার বিহীনরা দিচ্ছে ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। এটা বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ হাউজ অ্যান্ড ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া যায় না, তাহলে দাম বাড়বে কেন? দুর্নীতি ছাড়া গ্যাসের কোনও কাজ হয় না। এখনই কোম্পানিগুলো লাভজনক জায়গায় আছে। দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে গ্যাসের দাম না বাড়িয়েই আরো লাভ করতে পারবে তারা।

সিএনজি ফিলিং এন্ড কনভার্শন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বলেন, সিএনজির দাম বাড়ালে শুধু সিএনজি খাতেরই ক্ষতি হবে না, পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হবে।

বিকালে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির শুনানি চলাকালে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, শুনানিতে সবার বক্তব্য শোনা হচ্ছে। পরে পর্যালোচনা করে গ্যাসের দামের বিষয়ে কমিশন আদেশ দেবে। তিনি বলেন, গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লসের পরিবর্তে জালালাবাদের সিস্টেম গেইন হচ্ছে। এই অবস্থায় তাদের গ্যাসের দাম কেন বাড়াতে হবে জানতে চান তিনি।

শুনানিতে বাখরাবাদ ও জালালাবাদ একই হারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। বাসা বাড়িতে একচুলার বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫০ টাকা, দুই চুলার ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৪০ টাকা করার আবেদন করেছে। কোম্পানিটি বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম তিন টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে নয় টাকা ৭৪ পয়সা, সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ টাকা, আবাসিকের প্রি-পেইড মিটারে নয় টাকা ১০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা ৪১ পয়সা, সার উত্পাদনে দুই টাকা ৭১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে আট টাকা ৪৪ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে নয় টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা চার পয়সা, শিল্পে সাত টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪ টাকা পাঁচ পয়সা, বাণিজ্যিকে ১৭ টাকার পরিবর্তে ২৪ টাকা পাঁচ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে।