গুরুত্ব হারাচ্ছে জাতীয় পার্টি?

অলিউল ইসলাম

দেশের রাজনীতিতে ক্রমশ গুরুত্ব হারাচ্ছে জাতীয় পার্টি। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ থেকে শুরু করে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটির কাছে নাম প্রস্তাবসহ অন্যান্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলেও দলটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন আলোচনা হয় না। ক্ষমতায় থেকে জন্ম নেয়া এ দলটি এতদিন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্ব মেনে চলতো। কিন্তু এরশাদের মৃত্যুর পর বর্তমান পরিস্থিতিতে দলটি আর কতদিন টিকবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। আসছে জাতীয় নির্বাচনে দলটি আগের মতো সুবিধা করতে পারবে কি না, এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি রাজনৈতিক দলের টিকে থাকার প্রধান শর্ত হলো একজন নেতা। যে নেতা জাতীয়ভাবে এবং দলের মধ্যে গ্রহণযোগ্য হবেন। হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সেনা প্রধান ছিলেন এবং নয় বছর দেশ শাসন করেছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে নিয়ে সমালোচনা-আলোচনা যাই হোক না কেন, তিনি একজন জাতীয় নেতার ইমেজ গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। তার পেছনে একটি বড় সমর্থকগোষ্ঠীও ছিল। আর এরশাদের হাত ধরেই জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের রাজনীতিতে এসেছেন। তিনি একজন সজ্জন ব্যক্তি কিন্তু রাজনৈতিক ক্যারিশমা অথবা জনগণকে আন্দোলিত করার মতো নেতৃত্বগুণ তার নেই বলে মনে করেন অনেকে। অন্যদিকে ৭৮ বছর বয়সী এরশাদপত্নী সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ শারীরিকভাবে অসুস্থ। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার এখন পদচারণা নেই বললেই চলে। সবমিলে দলটি ভুগছে তীব্র নেতা সংকটে।
জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যারা আছেন তারা সবাই সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চান। তারা সরকারের আস্থাভাজন হয়ে কিছু সুবিধাভোগী হয়ে জীবন কাটানোর ব্রত নিয়েছেন যেন। এমনই বাস্তবতায় জাতীয় পার্টি সংগঠন হিসেবে ইতিমধ্যেই সংকটে পড়েছে। দলটির ২৭টি জেলা কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। এর পাশাপাশি ১৬টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় সবকটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। সাংগঠনিক কার্যক্রমে জাতীয় পার্টির অবস্থান কোথায়, সেটি নিয়ে জাতীয় পার্টির মধ্যেই নানারকম সমালোচনা রয়েছে। তাছাড়া দলের মধ্যে আছে অনৈক্যও। রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব একাধিকবার প্রকাশ্যে এসেছে। একটি অলিখিত সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় পার্টি এখনো টিকে আছে বলে মনে করছেন অনেকে। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিয়েছে বটে, কিন্তু অদৃশ্য কারণে তাদের মনোনীত অধিকাংশ প্রার্থীই নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে পিঠ দেখাতেন। আর্থিক সুবিধা নিয়ে তারা নির্বাচন থেকে সরে পড়েন বলে অভিযোগও আছে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি এখন আর রাজনৈতিক সংগঠন নয়, বরং ধীরে ধীরে একটি পারিবারিক ক্লাবের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।