গুদাম সংকটে ধান-চাল কিনতে পারছে না সরকার

গুদাম সংকটে ধান-চাল কিনতে পারছে না খাদ্য অধিদপ্তর। ফলে কৃষককে সহায়তা দিতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকার রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য সংগ্রহের ঘোষণা দিলেও তা কাজে আসছে না। এবারই প্রথম প্রান্তিক কৃষককে সহায়তা দিতে সরাসরি তাদের কাছ থেকে চার লাখ টন ধান কিনছে সরকার। কিন্তু সংগ্রহ অভিযানে গতি না থাকায় বাজারে কোনো প্রভাব নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারের গুদামে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টন খাদ্যশস্যের ধারণক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে গুদামে মোট মজুতকৃত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৫ টন। এর মধ্যে বোরো মৌসুমে সংগৃহীত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ৮ লাখ ৭৫ হাজার ২১১ টন। গতকাল পর্যন্ত বোরো মৌসুমের ধান সংগ্রহ করা হয়েছে ৮৩ হাজার ৬৫১ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ। এছাড়া সেদ্ধ চাল ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৯ টন ও আতপ চাল ৫৯ হাজার ৮১৪ টন ও গম ৩৯ হাজার ৫০ টন সংগ্রহ করা হয়েছে। এই হিসাবে খাদ্য অধিদপ্তরের গুদামে এখন ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৪০৫ টন খাদ্যশস্য রাখা যাবে। কিন্তু এখনও ধান, চাল, গম মিলিয়ে ৭ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৯ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ বাকি রয়েছে।চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি মণ ধানে একজন প্রান্তিক কৃষককে দুই’শ থেকে সাড়ে ৩’শ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণতে হয়েছে। ফলে সরকার ধানের দাম বাড়াতে এই মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট ১৬ লাখ টন খাদ্যশস্য সংহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর মধ্যে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল, দেড় লাখ টন আতপ চাল, ৪ লাখ টন ধান ও ৫০ হাজার টন গম। ধান ২৬ টাকা কেজি, সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা কেজি ও আতপ চালের কেজি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সরকারের গুদামে জায়গা না থাকায় খুবই ধীর গতিতে চলছে সংগ্রহ অভিযান।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযান ঝিমিয়ে পড়েছে কয়েকটি কারণে। এরমধ্যে রয়েছে গুদাম সংকট, প্রান্তিক কৃষকদের কাছে ধান না থাকা, চুক্তিবদ্ধ মিলারদের চাল সরবরাহে অনীহা ইত্যাদি। কারণ হিসেবে এই সূত্রটি জানিয়েছে, প্রান্তিক কৃষকদের কাছে এখন কোনো ধান নেই। ধারদেনা করে চাষাবাদ করায় মৌসুমের শুরুতেই তারা লোকসানে ধান বিক্রি করে দিয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, সরকারের বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচির জন্য প্রতি মাসে বড় পরিমাণে খাদ্যশস্য গুদাম থেকে খালাস হয়। তখন ধান-চাল সংগ্রহের গতি বাড়ানো হবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, সরকারের ধান, চাল কেনার প্রধান উদ্দেশ্য হলো ক্ষুদ্র কৃষকদের নায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত করা। কিন্তু সরকার যে পরিমাণ ধান, চাল কেনে এবং যে প্রক্রিয়ায় কেনে তাতে এটা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোছাম্মত্ নাজমানারা খানুম বলেন, চাল সংগ্রহের পরিমাণ বাড়লে প্রান্তিক কৃষকরা খুব একটা লাভবান হবেন না। তারা লাভবান হবেন ধান সংগ্রহে। আমরা ২০০টি পেডি সাইলো নির্মাণ করব। প্রত্যেকটার ধারণক্ষমতা ৫ হাজার টনের। এগুলো নির্মাণ হলে আমরা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার পরিমাণ বাড়াতে পারব।