গাংনী; পথের ধারের ভাপা পিঠা

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনীঃ
মেহেরপুরের গাংনীর রাইপুর গ্রামের মানজার। পেশায় একজন পিয়াজু বিক্রেতা। সারাদিন পেয়াজু বিক্রি করে বাড়ি ফেরেন। তড়ি ঘড়ি ময়দা নারকেলের স আর হাড়ি পাতিল নিয়ে ছুটে চলেন বাজারে। তৈরী করেন ভাপা পিঠা। গরম গরম মজাদার এ পিঠা খেতে দূর দূরান্ত থেকে চলে আসেন সব বয়সি নারী পুরুষ। গভীর রাত পর্যন্ত চলে বেচা কেনা। প্রতিদিন খরচ খরচা বাদে হাজার খানেক টাকা পকেটে আসে। প্রতি শীতকালে তার এ ব্যবসা চলে।

শুধু মানজার নয়, তার মতো অনেকেই বিভিন্ন বাজার ঘাটে শীতের পিঠা বিক্রি করছেন। বামন্দী বাজারের পিঠা বিক্রেতা সোহেল রানা বাবু জানান, গত দেড় মাস যাবত তিনি পিঠা বিক্রি করছেন। দিন মজুরের কাজ শেষে বাড়ির বউয়ের দেয়া সব সরঞ্জামাদি নিয়ে বসে পড়েন বাসস্ট্যান্ডে। কথা বলার সময় নেই তার। দুহাতে ময়দা মাখা আর খেজুরের গুড়ের সস । ভাপা পিঠা তৈরী করছেন আর ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেতারা। কার আগে কে নিবে তা নিয়ে চলে পাল্লা। অবশ্য মাঝে মধ্যে বাগ বিতন্ডাও লেগে যায়। প্রতিটি ভাপা পিঠা বিক্রি হয় ১০ টাকায়।

গাংনীর পিঠা বিক্রেতা তেতুল মন্ডল জানান, গরমকালে রেজাউল চত্বরে শরবত বিক্রি করতেন। এখন শীতকাল তাই পিঠা বিক্রি করছেন তিনি। প্রতিদিন অন্ততঃ দেড় হাজার টাকা আয় হয়। একই কথা জানালেন পিঠা বিক্রেতা রমজান আলী।

পিঠা খেতে আসা জুরাইস ইসলাম জানান, বাড়িতে সব সময় পিঠা তৈরী হয় না। তাছাড়া নারীরা এখন সংসারের কাজকর্ম ফেলে আগের মতো পিঠা তৈরী করে না। অনেকে আবার পিঠা তৈরী করতেও জানে না। তাই এখান থেকে পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের জন্য। অত্যন্ত সুসাদু এ পিঠা এবং ঘরোয়া পরিবেশে তৈরী বলে প্রশংসাও করেন তিনি। একই কথা জানান কলেজ শিক্ষার্থী তমা। পিঠা খেতে বান্ধবীদের সাথে এসেছেন তিনি। নিজেরা খেয়ে আবার বাড়ির লোকজনদের জন্যও নিয়েছেন তারা।

গাংনী মহিলা ডিগ্রী কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রমজান আলী জানান, শীতকালে পিঠা পুলির চাহিদা বেশ। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। শীতকালে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই নানা রকমের পিঠা পুলি তৈরী হতো। এখন আর আগের মতো নেই। সব কৃত্তিমতায় ভরা। শহরের সব ধরণের পিঠা পুলি বিক্রি হয়। ফলে আর কেউ ঘরোয়া ভাবে তৈরী করে না। তার পরও পথের ধারে যারা পিঠা বিক্রি করছেন তারা এ ঐতিহ্যটিকে টিকিয়ে রেখেছেন। সেই সাথে পিঠা বিক্রি করে উপড়ি আয় করছেন।