‘গণধর্ষণ ও হত্যা’র পর জীবিত: ৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে আদালতে তলব

ডেস্ক নিউজঃ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত স্কুলছাত্রী জিসা মনি অপহরণ পরবর্তী নাটকীয় ঘটনায় এবার তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতের হাকিম কাওছার আলম এক আদেশে সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জান ও মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আবদুল হাইকে আদালতে তলব করেছেন। পাশাপাশি আগামী সোমবার এ মামলায় গ্রেফতার চার আসামির উপস্থিতিতে জামিন ও রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলেও আদেশ দেন আদালত।

অপরদিকে এ মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই শামীম আল হাসানকে মামলার নথিপত্রসহ তলব করেছেন হাইকোর্ট।

আদালত সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার এ মামলার আসামিদের জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। এ সময় নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ৩য় আদালত স্কুলছাত্রী জিসা মনি বেঁচে থাকলেও তিন আসামি কেন ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে, তার ব্যাখ্যা চেয়ে সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান ও বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক আবদুল হাইকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে মামলার এজাহার ও জবানবন্দির নথিপত্রসহ সশরীরে উপস্থিত হয়ে এর ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ৩১ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

এদিকে হাইকোর্টে রিভিশন মামলার বাদী আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির জানান, স্কুলছাত্রী জিসা বেঁচে থাকার পরও হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায় সংক্রান্ত বিচারিক আদালতের সব রেকর্ড ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (আইও) তলব করেছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

কার্যক্রমের বৈধতা ও যৌক্তিকতার প্রশ্ন তুলে করা আবেদনের (রিভিশন) ওপর শুনানিতে এ আদেশ দেয়া হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার প্রথম তদন্তকারী (আইও) শামীম আল মামুনসহ দুইজনকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত।

এ সময় আদালত বলেন, ভিকটিম যেহেতু বেঁচে আছে সুতরাং হত্যার বিষয়টি মিথ্যা। তাছাড়া ধর্ষণের বিষয়টিও নিশ্চিত নয়। আসামিরা কেন হত্যা ও ধর্ষণের জবানবন্দি দিয়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে আগামী দুই কার্য দিবসের মধ্যে সদর মডেল থানার ওসি এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হল।
আগামী সোমবার চার আসামিকে একত্রে আদালতে উপস্থিত করে রিমান্ড ও জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আসামিরা যদি আবারও জবানবন্দি দিতে চায় সেই ব্যবস্থাও করা হবে বলে আদালত জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৪ জুলাই স্কুলছাত্রী জিসা মনি (১৫) নিখোঁজ হয়। এক মাস পর ৬ আগস্ট একই থানায় স্কুলছাত্রীর বাবা অপহরণ মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বন্দর উপজেলার বুরুন্দী খলিলনগর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২২) ও তার বন্ধু একই এলাকার সামসুদ্দিনের ছেলে রকিবকে (১৯)। ওই দিনই তাদের গ্রেফতার করা হয়। একই ঘটনায় দুই দিন পর গ্রেফতার করা হয় বন্দরের একরামপুর ইস্পাহানি এলাকার বাসিন্দা নৌকার মাঝি খলিলকে (৩৬)।

গত ৯ আগস্ট পুলিশ জানায়, স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করে আসামিরা ওই দিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তবে ২৩ আগস্ট দুপুরে বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকায় জীবিত অবস্থায় ফিরে আসে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী জিসা মনি।

তিনি তার পরিবারকে জানিয়েছেন, বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ইকবাল নামের এক যুবককে তিনি বিয়ে করেছেন। পরে তার কথিত স্বামী ইকবালকে পুলিশ গ্রেফতার করে সেই অপহরণ মামলায় আসামি হিসেবে যুক্ত করে।

এ ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে পুলিশের তদন্ত ও আদালতে দেয়া আসামিদের জবানবন্দি প্রদানের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।