খুলনায় জমজমাট কাঁচামরিচ এর রসগোল্লার হাঁট

খুলনা সংস্করণঃ
শীতের শেষ মৌসুমে নগর খুলনায় অন্যরকম প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত মিষ্টি দোকানে এ যেন মিষ্টির একটি পরিপূর্ণ হাট যেখানে ক্রেতার নেই কোন অভাব।  রসগোল্লার কথা মনে হলেই চোখে ভেসে উঠে চিনির ঘন শিরার মধ্যে ভেসে বেড়ানো রসে টইটুম্বুর ছানার তৈরি গোল্লার কথা। তবে রসগোল্লা ও তার রসে কাঁচামরিচ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নতুন এক ধরনের মিষ্টি। সবুজ রংয়ের এ মিষ্টির নাম দেওয়া হয়েছে কাঁচা ঝালের রসগোল্লা। কিছুদিন ধরেই নতুন এই রসগোল্লায় বুঁদ খুলনার ভোজনবিলাসীরা। ফেসবুক ও ইউটিউবেও এ ঝাল-মিষ্টির ছড়াছড়ি। কেউবা বোঝার চেষ্টা করছেন; কেউবা নিচ্ছেন রেসিপি। আবার খেয়ে পরখ করতে প্রতিদিন অনেকে ভিড় করছেন খুলনার রাজমিঠাই নামের মিষ্টির দোকানে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক দাবি করেন, ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো কাঁচা ঝালের রসগোল্লা বাজারে আনি। ফেসবুক ও ইউটিউবে এটা ছড়িয়ে পড়ার পর রাজশাহী, কুমিল্লাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে বিক্রি হচ্ছে। তারা এটি উদ্ভাবনের দাবি করলেও নতুন এ রসগোল্লা আমরাই প্রথম তৈরি করেছি। খুলনা নগরীর এমএ বারী সড়কে, রাজমহল ফুডকোর্টে এই রাজমিঠাই নামের মিষ্টির দোকানটিতে এই ঝাল-মিষ্টি খেতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভিড় করেন অনেকে। রাজমিঠাইয়ে গিয়ে দেখা যায়, থরে থরে সাজানো রয়েছে বাহারি মিষ্টি কড়াইয়ে সবুজ রঙের রসগোল্লার রসে ভাসমান কাঁচা ঝাল। এই রসগোল্লা কিনতেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেল। কেউ কিনে খাচ্ছেন, কেউ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। নগরীর বয়রা এলাকার গৃহকর্ত্রী ইসমাত আরা বলেন, ফেসবুক ও ইউটিউবে কয়েক দিন ধরে দেখছি। আগের দিন লোক পাঠিয়েছিলাম, মিষ্টি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই আজ নিজেই এলাম। নগরীর আযম খান কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী আরমান, সুমন্ত ও সেজান বলেন, অনেকে রিভিউ দিচ্ছে দেখে এসেছি। নতুন মিষ্টি, কিন্তু খেয়ে আহামরি কিছু মনে হয়নি। অনেকটা ‘হুজুগে’ পড়ে সবাই খাচ্ছে। রাজমিঠাইয়ের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী গেলে শতাধিক প্রকার মিষ্টি দেখতে পাওয়া যায়। অথচ খুলনায় হাতেগোনা ৮ থেকে ১০ প্রকারের মিষ্টি বিক্রি হয়। এই শহরে যুগ যুগ ধরে যারা ব্যবসা করছেন তারাও মিষ্টির প্রকার বাড়ানোর দিকে নজর দেননি। গ্রাহকদের নতুন ধরনের মিষ্টির স্বাদ দিতেই ২০২০ সালে আমরা রাজমিঠাই প্রতিষ্ঠা করি। শুরু থেকেই আমরা মিষ্টির নতুন প্রকারের ওপর জোর দিয়েছি। এখন পর্যন্ত শতাধিক প্রকারের মিষ্টি বাজারে এনেছি। যার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ প্রকার মিষ্টি প্রতিদিন আমাদের শোরুমে পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, মিষ্টির স্বাদ নিয়ে গবেষণা করতে করতে গত বছরের অক্টোবরে কাঁচা ঝালের রসগোল্লা বাজারে আনি। প্রথম দিকে বেশি বিক্রি হতো না। ফেসবুকে আমাদের নিয়ে ট্রল করেছেন অনেকে। এখন মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে এটি কিনছেন। আমরা প্রতিদিন দুই হাজার পিস কাঁচা ঝালের রসগোল্লা তৈরি করছি। ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কাঁচা ঝালের রসগোল্লা তৈরি প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি জানান, ছানা, কাঁচামরিচ ও চিনি এই রসগোল্লার মূল উপকরণ। তাদের নিজস্ব ফার্মের দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করেন। সেই ছানায় মেশানো হয় মিহি করে পেষা মরিচ। চিনির শিরাতেও দেওয়া হয় মরিচ। এতেই তৈরি হয় হালকা মিষ্টি ও ঝালের এ সুস্বাদু মিষ্টান্ন। পুরো শহর ঘুরে আরও একটি মিষ্টির দোকান, রয়েল মোড়ের আদি যাদভ ঘরে এই কাঁচা মরিচের মিষ্টি সহ কমলা লেবুর বাহারী মিষ্টির সন্ধান মেলে। প্রতি পিস রসের বাহারি মিষ্টির দাম ২৫ টাকা বলে জানান দোকান মালিক।