খুলনাবাসী যাঁদের মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান

মামুন রেজা : নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের পর গুঞ্জন শুরু হয়েছে মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে। খুলনা বিভাগের ৩৬ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে ১০ জনকে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দেখতে চান এ অঞ্চলের মানুষ। ইতিমধ্যে তাদের কর্মী-সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ দাবির কথা তুলে ধরেছেন। দাবির সমর্থনে চলছে জোর প্রচারণা। তবে সংসদ সদস্যরা বিষয়টি দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।

সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদে খুলনা বিভাগ থেকে দুইজন পূর্ণ মন্ত্রী, দুইজন প্রতিমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় একজন হুইপের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এবার এ সংখ্যা দ্বিগুণ করার দাবি এই বিভাগের মানুষের।

আওয়ামী লীগ সরকারের এ মেয়াদে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। তথ্যমন্ত্রী ছিলেন কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেক এবং হুইপ ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দার। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা বিভাগের ৩৬টির সব আসনেই জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট।

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই বাগেরহাটে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন বাগেরহাট-২ আসনের শেখ সারহান নাসের তন্ময়। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনের ছেলে। শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই নয়; তাকে মন্ত্রিসভায় দেখার দাবিতে সোচ্চার এলাকার সাধারণ মানুষও। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকেও স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে।

‘নড়াইল এক্সপ্রেস’খ্যাত মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে এখন নতুন স্বপ্ন দেখছেন নড়াইলবাসী। তাদের প্রত্যাশা,

প্রধানমন্ত্রী নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফিকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে আরেকটি উদাহরণ সৃষ্টি করবেন।

নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম অনিক বলেন, ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খেলাধুলা, কৃষি, পরিবেশসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাশরাফি এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এসব উন্নয়ন কার্যক্রম আরও বাড়বে। মন্ত্রী হলে তো কথাই নেই।

মন্ত্রিত্ব প্রসঙ্গে মাশরাফি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় আমি সংসদ সদস্য হয়েছি। তিনি যে দায়িত্ব দেবেন, সেটাই আমি আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করব।

খুলনা-৫ আসনে এবারও নির্বাচিত হয়েছেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। তাকে আবারও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী করা হতে পারে বলে নির্বাচনী এলাকা ফুলতলা ও ডুমুরিয়ার মানুষের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। এলাকার মানুষের দাবিও সেটি।

খুলনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সন্তান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল। স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার পরিবার ‘অভিভাবক’ হিসেবে পরিচিত। তাকে নৌমন্ত্রী করা হতে পারে বলে গত ২/৩ দিন ধরে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে নগরীতে।

খুলনা-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক তারকা ফুটবলার, শিল্পপতি ও এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী। ক্লিন ইমেজের এই রাজনীতিবিদকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।

খুলনা-৬ আসন থেকে এবারই প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মো. আকতারুজ্জামান বাবু। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

যশোরের তিনজন সাংসদের নাম রয়েছে আলোচনার শীর্ষে। তারা হলেন- যশোর-২ আসনের মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন, যশোর-৩ আসনের কাজী নাবিল আহমেদ ও যশোর-৬ আসনের ইসমাত আরা সাদেক। এদের মধ্যে ইসমাত আরা সাদেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকায় তার এলাকার ভোটাররা মনে করছেন, নতুন মন্ত্রিপরিষদেও বাদ পড়বেন না তিনি।

যশোর-৩ আসনের সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারীরা বলছেন অন্য কথা। উচ্চশিক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের এ নেতা এমনিতেই সরকারপ্রধানের সুনজরে আছেন। যশোরের উন্নয়নেও রয়েছে তার বিশেষ অবদান। ফলে মন্ত্রিত্ব পাওয়াটা তার জন্য এবার সহজ হবে।

যশোর-২ আসনে মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন এবারই প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে নিয়েও ভোটারদের প্রত্যাশা অনেক। স্থানীয়রা মনে করছেন, মন্ত্রিপরিষদে থাকার সুযোগ মিলতে পারে তারও।

সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হককে মন্ত্রী করার দাবিতে বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরায় সংবাদ সম্মেলন করেছে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ।

মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারকে আবারও মন্ত্রিসভায় দেখতে চাইছেন তার এলাকার মানুষ। মাগুরা-১ আসন থেকে এবারই প্রথম সংসদ সদস্য হয়েছেন সাইফুজ্জামান শিখর। তাকেও মন্ত্রিসভায় দেখার দাবিতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার এলাকার ভোটাররা।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দারকে এবারের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে, এমন আলোচনা শুরু হয়েছে এলাকায়।

একাদশ সংসদে কুষ্টিয়ার মানুষ মন্ত্রী পেয়েছিলেন একজন। এবার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর পাশাপাশি কুষ্টিয়া-৩ আসনের মাহবুবউল আলম হানিফকেও মন্ত্রিসভায় দেখতে চাইছেন এলাকার মানুষ।

লেখক : সমকালের খুলনা ব্যুরো প্রধান