খালেদা জিয়ার সম্পত্তি কত, কে পাবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
খালেদার অসুস্থতা এবং শারীরিক অবস্থার অবনতির প্রেক্ষাপটে তার সম্পদ নিয়ে নতুন করে আলোচনা উঠেছে। অবশ্য বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদ নিয়ে বিএনপির নেতৃবৃন্দের মধ্যে আগ্রহ কম। বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদ কত এবং সেই সম্পদ কে পাবে, এ নিয়ে পর্দার আড়ালে চলছে খেলা। বেগম জিয়ার পরিবারে এ নিয়ে নানা রকম টানাপোড়েনের গুঞ্জন পাওয়া যাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া দুইবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ছিলেন। যদিও জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দেখানো হয়েছিল যে, একটি ভাঙ্গা স্যুটকেস ছাড়া তাদের কিছুই নেই। কিন্ত বাস্তবে দেখা যায় যে, জিয়াউর রহমান মৃত্যুর সময়ও বিপুল সম্পদ রেখে গিয়েছিলেন। সাভারে এবং দিনাজপুরে জিয়াউর রহমানের ৩২ বিঘা জমির সন্ধান পাওয়া যায় যে জমিগুলো বেগম খালেদা জিয়া এখনও বিক্রি করেননি। এই জমি গুলোর মালিক বেগম খালেদা জিয়া। এছাড়াও জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়াকে দুটি বাড়ি দেয়া হয়েছিল। ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটির লিজ চুক্তি বাতিল করা হয় আর গুলশানের বাড়িটিতে এখন একটি বহুজাতিক কোম্পানীকে বেগম খালেদা জিয়া ভাড়া দিয়েছেন। সেই বাড়িটিও বেগম খালেদা জিয়ার নামে। বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে এই বাড়িটির মালিক কি সরকার পাবে নাকি তার পরিবারের সদস্যরা পাবে এ নিয়ে আইনগত বিতর্ক রয়েছে। এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ২০ কোটি টাকার কাছাকাছি রয়েছে, যেটি তিনি ২০০৭ সালে জরিমানা দিয়ে বৈধ করেছিলেন। এ গেলো দেশে তার বৈধ সম্পত্তির হিসেব। কিন্তু বিভিন্ন দেশে বেগম খালেদা জিয়ার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদ গুলো আসলে দেখভাল করেন মোসাদ্দেক আলি ফালু এবং ফালুই বেগম খালেদা জিয়ার আর্থিক বিষয়াদি দেখাশোনা করেন। এখন যদিও মোসাদ্দেক আলি ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। কিন্তু সেখান থেকে তিনি সব ব্যবসা গুলো পরিচালনা করেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ৪টি দেশে বেগম খালেদা জিয়ার অন্তত এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ আছে। সৌদি আরবে রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার একটি শপিংমল এবং দুইটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। এছাড়াও সৌদি আরবের একটি কোম্পানিতে বেগম খালেদা জিয়ার বিনিয়োগ রয়েছে। আবুধাবিতে বেগম খালেদা জিয়ার দুইটি ফ্ল্যাট এবং অন্তত ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়া কাতারে ১০০ কোটি টাকার উপর হাউজিং এবং অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করে রেখেছেন। মধ্য প্রাচ্যের এই তিন দেশ ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদ রয়েছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। মালয়েশিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার দুইটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে যার একটিতে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো থাকতেন, অন্যটি ভাড়া দেওয়া আছে। এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদ রয়েছে সিঙ্গাপুরে। সেখানে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশী টাকায় অন্তত ৭৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা যায়।
আর এই বিপুল সম্পদের মালিক কে হবে এই নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের মাঝে টানাপোড়েন চলছে। যদিও বেগম খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত কোন আনুষ্ঠানিক উইল করেননি। আইন অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার বৈধ উত্তরাধিকার তারেক জিয়া। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া তারেক জিয়াকে তার সব সম্পদ দিতে চান না। বরং তিনি তার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দুই সন্তানের কাছেই মোটা অঙ্কের সম্পদ দিয়ে যেতে চান। বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদের কেয়ারটেকার মোসাদ্দেক আলি ফালুকে এই ব্যাপারে নির্দেশনাও দেয়া আছে। মোসাদ্দেক আলি ফালুর সাথে তারেক জিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। আর এই কারণেই তারেক জিয়া বা তার পরিবারের কোন সদস্যরা বেগম খালেদা জিয়ার কঠিন সময়ে তার পাশে আসছেন না বলে জানা গিয়েছে। যেহেতু বেগম খালেদা জিয়ার অধিকাংশ সম্পদ বেনামে তাই এগুলো মৌখিক নির্দেশেই তার উত্তরাধিকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ঢাকায় যে বৈধ সম্পত্তি রয়েছে সেগুলো মুসলিম আইন অনুযায়ী বন্টন করা হবে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে। তাহলে সেক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার ভাই এবং বোন কি পাবে তা নিয়ে তাদের মধ্যেও এক ধরণের উৎকণ্ঠা রয়েছে।