খসড়া চুড়ান্ত: ‘সরকারের কাছে নয়, আদালতে তিন মাসের প্যারোল চাইবেন খালেদা’

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্যারোলের আবেদন করবেন বেগম খালেদা জিয়া। তবে সরকারের কাছে নয়, প্যারোলের আবেদন করা হবে আদালতে। বেগম খালেদা জিয়ার তিনজন আইনজীবী আজ কোর্টে তাঁদের চেম্বারে বৈঠক করে প্যারোলের আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই আবেদনের একটি খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই খসড়াটি সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সংশোধন করে যেকোনো দিন আদালতে উপস্থাপন করা হতে পারে।

আইন অনুযায়ী প্যারোলের দুই রকম আবেদন করা যায়। প্রথমতঃ সরকারের কাছে প্যারোলের আবেদন করা যায়। সরকার যদি বিবেচনা করে যে বিশেষ বিবেচনায় তাঁকে প্যারোল দেয়া দরকার সেক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্যারোল আবেদন মঞ্জুর করতে পারে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট কাজ করে তিনি আবার জেলে ফেরত আসেন। সাধারণত কোনো নিকটাত্মীয় মারা গেলে বা গুরুতর কোনো অসুস্থতার কারণে প্যারোল দেয়ার বিধান রয়েছে। সরকার বিভিন্ন সময়ে দণ্ডিত বা অভিযুক্ত কয়েদিদের এধরণের প্যারোল দিয়ে থাকেন। দ্বিতীয় ধরনের প্যারোল হলো আদালত। আদালত যদি মনে করে যে কোনো বিশেষ ব্যবস্থায় একজন দণ্ডিত বা অভিযুক্তকে সাময়িক সময়ের জন্য প্যারোল দিতে হবে তাহলে সর্বোচ্চ আদালত এটা বিবেচনা করতে পারে। এ ধরণের প্যারোল দেয়ারও একাধিক নজির রয়েছে।

সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে, দেনদরবার করে লাভ হবে না বিবেচনা করেই বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা হবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগেই এধরণের আবেদন করা যায় বলে বিএনপির কাছে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

প্যারোলের আবেদনের যে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে তাতে তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা বলা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে যে, তাঁর যে ধরনের অসুখ তাতে তাঁর পছন্দের ডাক্তারের কাছে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা করা প্রয়োজন। তা না হলে তিনি পঙ্গু হয়ে যাবেন। এমনকি মৃত্যুর মুখেও পতিত হতে পারেন। প্যারোল আবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে, কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হচ্ছে সেখানে ফিজিওথেরাপিসহ খালেদা জিয়ার অন্যান্য চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। এজন্য তাঁর প্যারোলে মুক্ত হওয়া প্রয়োজন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই প্যারোলের শর্ত পূরণের জন্য আবেদনে তিনটি অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, এই প্যারোলের সময় তিনি চিকিৎসা ব্যতিরেকে অন্য কোন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবেন না। তিনি কোন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ ও কোন বক্তব্য বিবৃতি দেবেন না। দ্বিতীয় অঙ্গীকারে বলা হবে, প্যারোলের সময় তিনি পাসপোর্ট জমা দেবেন। কাজেই তার বিদেশে যাওয়ার কোন প্রশ্নই উঠবে না এবং তিনি দেশেই চিকিৎসা নিতে চান। তৃতীয় অঙ্গীকারে বলা হবে, প্যারোলের নির্দিষ্ট সময় পার হলে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে কারাগারে ফিরে আসবেন।

খালেদা জিয়া মাসের প্যারোলের জন্য আবেদন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মনে করছেন, তিন মাসের সময়সীমা শেষ হলেও খালেদা জিয়া চিকিৎসা যদি সমাপ্ত না হয় এবং চিকিৎসকরা যদি মেডিকেল রিপোর্ট সেভাবে দেন তাহলে আদালতের বিবেচনায় প্যারোলের মেয়াদ বাড়তে পারে।

বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মনে করছেন বেগম খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হলে তার অন্যান্য মামলার জামিন ত্বরান্বিত করা সহজ হবে। খালেদা জিয়ার একজন আইনজীবী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রায় সব মামলায় জামিন পেয়েছেন। এখন মাত্র দুটি মামলা বাকি আছে। এ দুটি মামলায় জামিন হলে আইনগতভাবে তাকে মুক্ত করা যাবে। তবে এ ব্যাপারে সরকার পক্ষের প্রধান কৌশলী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। একটি মামলায় তাকে হাইকোর্ট দণ্ড দিয়েছেন। সে মামলায় তার কোন জামিন নেই। তাকে জামিন পেতে হলে আপিল বিভাগে আবেদন করতে হবে। আপিল বিভাগে এরকম কোন আবেদন বেগম জিয়ার আইনজীবীরা করেননি। তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় যে মামলায় তিনি নিম্ন আদালতে বিচারাধীন আছেন, সে মামলায় হাইকোর্ট তাকে এখনও জামিন আদেশ দেননি। তাছাড়া আরও অনেক মামলা আছে, খালেদা জিয়ার মুক্ত হতে হলে সে মামলাগুলোতে জামিন নিতে হবে।

একটি সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির একাধিক নেতা দেনদরবার করেছিলো। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরাও সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করেছিলো। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া নিজেই সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে বা সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে প্যারোল নিতে চান না। বরং তিনি আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্যারোল নিতে চান। তবে আইনী প্রক্রিয়ায় তার প্যারোল পেতে হলে সরকারকেও ইতিবাচক সাড়া দিতে হবে। কারণ প্যারোল হলো একটি সমঝোতা এবং সেখানে সরকারের অনাপত্তির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।