কুষ্টিয়ায় চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে অর্ধশত তরুন তরুণীর অর্থ আত্মসাৎ ধরাছোঁয়ার বাইরে প্রতারক চক্র!

আলীফ আজগর সবুজ : কুষ্টিয়ায় উচ্চ বেতনে চাকুরীর প্রলভন দেখিয়ে অর্ধশত বেকার তরুন তরুনীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইদ্রীস নামের এক ভয়ংকর প্রতারকের বিরুদ্ধে। প্রতারনায় নিঃস্ তরুন তরুনীরা বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সুফল পাচ্ছেনা। কিন্তু ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে বীর দর্পে ঘুরে বেরাচ্ছে প্রতারক ইদ্রীস ও তার সহযোগীরা।
জানা যায়,কুষ্টিয়ার ভেরামারার জুনিয়াদাহ গ্রামের হতদরিদ্র রুম্পা খাতুন শিক্ষানবিস সাস্থ্য সেবিকা হিসেবে চাকুরি করতেন একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। গত ১৫ জানুয়ারী হঠাৎ তার ব্যাবহৃত মুঠোফোনে একটি কল আসে, অপর প্রান্ত থেকে একটি পুরুষ কন্ঠ তার পরিচয় দিয়ে বলে আমি ইদ্রীস উপমা শিক্ষা ও সাস্থ্য ফাউন্ডেশন থেকে বলছি। আপনি কি চাকুরী খুজছেন,আপনি কি স্বল্প খরচে মাত্র ৬ মাসের মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে সার্টিফিকেট অর্জনের মাধ্যমে প্রতি মাসে আট হাজার টাকা বেতনে উপমা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে চাকুরী পেতে আগ্রহী? তাহলে চলে আসুন কুষ্টিয়া রাইফেলস ক্লাবের বিপরীতে আমাদের অফিসে। এমনই চটকদার ফোন কল আর দালাল দ্বারা প্রভাবিত করে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন প্রত্যান্ত অঞ্চলের বেকার যুবক যুবতীদের মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট প্রশিক্ষণ প্রদান ও উচ্চ বেতনে চাকুরী দেবার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সটকে পরেছে ইদ্রীস নামের ঐ প্রতারক। সে মিরপুর উপজেলার হাজরাহাটি এলাকার আতিয়ার রহমান@ আইতে কানার ছেলে।

জানা যায়,কুষ্টিয়া রাইফেলস ক্লাবের সামনে একটি আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকঢোল পিটিয়ে উপমা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে একটি ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ছিলেন ইদ্রীস নামের ঐ ব্যাক্তি। শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি কুষ্টিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের প্রায় অর্ধশত শিক্ষিত তরুন তরুনীদের কাছ থেকে এম এল এ এফ পি কোর্সে ছয় মাস মেয়াদে প্রশিক্ষণ এবং সার্টিফিকেট প্রদান ও মাসিক আট হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেন। এবং প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে সাত হাজার দু’শ টাকা করে জামানত রাখেন। মাস তিনেক কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নাম সর্বস্ব ঐ প্রতিষ্ঠানটি এসব কর্মীদেরকে দিয়ে নিন্মমানের ইউনানী ঔষধ সামগ্রী বিক্রয় ও ভুয়া ডাক্তার দ্বারা মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করান। প্রতিষ্ঠানটির নানাবিধ বিতর্কীত কার্মকান্ডে একপর্যায়ে মাঠকর্মীরা নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে শংকায় পরে যান।এর পর ভুঁইফোড় ঐ প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা তিন মাসের বেতন ও জামানতের টাকা ফেরত চাইলে সটকে পরে প্রতারক ইদ্রীস ও তার সহযোগীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতারনার শিকার এক নারী কর্মী এ প্রতিবেদককে জানান, দুই বছরের কন্যা শিশু রয়েছে তার।স্বামী মাদকাসক্ত যে কারনে বাবার বাড়িতে থাকতে হচ্ছে তাকে। স্বল্প খরচে প্রশিক্ষণ শেষে সার্টিফিকেট আর আট হাজার টাকা মাসিক বেতনে ইদ্রীসের এ চাকরীর প্রলোভনে চরা সুদে ঋন নিয়ে জামানতের সাড়ে সাত হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি।তিন মাস কাজ করার পর সার্টিফিকেট কিংবা বেতনতো দূরের কথা উল্টো প্রতিষ্ঠান আর তার মালিকেই খুজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পরেছে। প্রতিষ্ঠানটির শিরিনা খাতুন নামের আরেক কর্মী জানান,তিন মাস কাজ করেছি, সেই সাথে ধারকর্জ করে জামানতের টাকা দিয়েছি।এখন কোথায় সার্টিফিকেট, কোথায় প্রতিষ্ঠান আর বেতনইবা দেবে কে তার হদিস পাচ্ছি না। তারা জানান, প্রতারক ইদ্রীস এর আগেও ময়মনসিংহ থেকে একই ভাবে প্রায় সত্তর লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে ছিল। এ ব্যাপারে প্রতারক ইদ্রীসের সাথে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।