কুষ্টিয়ার ঝাউদীয়ায় ডেন্টাল চিকিৎসার নামে প্রতারনা

আলীফ আজগর সবুজ : কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদীয় বাজারে ডেন্টিস্ট না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারনা করে আসছে শাহিন নামের এক কথিত ডেন্টিস্ট । সে নামমাত্র ডিপ্লোমা কোর্সে সার্টিফিকেট অর্জন করে ব্যাবস্থাপত্র ও নিজ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে নিজেকে ডেন্টিস্ট পরিচয় দিয়ে প্রতারিত করছে ঐ এলাকার সহজ সরল সাধারন মানুষকে। চিকিৎশাস্ত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্থাৎ প্রাক স্নাতক উপাধি প্রাপ্তদের এমবিবিএস ডাক্তার বলা হয়। যারা তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার লেখার বৈধতা রাখেন।বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল এ্যাক্ট ২০১০ এর ২৮। (১) ধারায় বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণার আশ্রয় লইয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে একজন স্বীকৃত মেডিকেল চিকিৎসক বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসক হিসাবে এই আইনের অধীনে নিবন্ধন, অথবা নিবন্ধন করিবার উদ্যোগ গ্রহণ, অথবা মিথ্যা বা প্রতারণামূলক প্রতিনিধিত্ব প্রকাশ করিবার চেষ্টা করেন অথবা মৌখিক বা লিখিতভাবে উক্তরূপ ঘোষণা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ড অথবা ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। একই আইনের ধারা(৩) এ বলা হয়েছে এই আইনের অধীন নিবন্ধনকৃত না হইয়াও যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে এই আইনের অধীনে নিবন্ধনকৃত একজন মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক বলিয়া প্রতারণা করেন, অথবা প্রতারণামূলকভাবে তাহার নাম বা পদবীর সংগে নিবন্ধনকৃত মর্মে কোন শব্দ, বর্ণ বা অভিব্যক্তি ব্যবহার করেন, তাহার মিথ্যা পরিচয়ের দ্বারা অন্য কোন ব্যক্তি প্রতারিত না হইলেও, তাহার উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ড বা ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন।
অথচ ঝাউদীয়া বাজারে ডাক্তারের সহকারী, ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ অথবা কোন হাসপাতালে চাকুরির অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে নামের আগে ডেন্টিস্ট পদবি ব্যাবহার সহজ বিষয় হয়ে পড়েছে কথিত ডেন্টিস্ট শাহিনের কাছে। এ ধরণের ভুয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ি গোটা ইউনিয়ন ব্যাপী। এদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়না কোন আইনি ব্যবস্থা। এদের হাতে পড়ে একদিকে যেমন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারাচ্ছে অনেকে,আরেক দিকে প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে গ্রামের অশিক্ষিত খেটে খাওয়া মানুষ।
ঝাউদীয়া বাজারের হেলথ এ্যাসিস্টেন্ট, এল এম এফ পি, এমনকি ওষুধের দোকানীরা পর্যন্ত তাদের নামের আগে ডাক্তার বসিয়ে প্রতিনিয়ত রোগী দেখছেন এবং প্রতারণা করছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এমন একাধিক ভুয়া ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া গেছে এই এলাকায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ঝাউদীয়া বাজার এলাকায় মা ডেন্টাল কেয়ার নামে একটি ভুয়া চিকিৎসালয় খুলে শাহিন নামের ঐ ব্যাক্তি নিজের নামের আগে ডেন্টিস্ট টাইটেল জুড়ে দিয়ে রঙিন প্রেসক্রিপশনে প্রতিদিন রোগী দেখছেন। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নোংড়া ও অস্বাস্থ্যকর একটি দোকান ঘড়ে বসেই ‘স্থায়ী ও অস্থায়ী ফিলিং, লাইট কিউর মেশিনে ফিলিং, পলিসিং, আকাঁ-বাঁকা দাঁত সোজা করা, দাঁত উঠানো, দাঁত বাধানো, রুট ক্যানেল, সিস্ট অপারেশনসহ বিভিন্ন জটিল ও কোঠিন দন্তরোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তিনি। রোগীর প্রকার ভেদে ১ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ভুয়া ডেন্টিস্ট শাহিনের কাছে জানতে চাইলে,তিনি প্রয়োজনিয় কাগজ পত্র আনার কথা বলে সংবাদকর্মীদের দোকানের বাহিরে অপেক্ষায় রেখে বেড়িয়ে যান। কিছুক্ষণ পরে সোহেল নামের স্থানীয় এক চিন্হিত সন্ত্রাসীকে সাংবাদিকদের কাছে ডেকে নিয়ে আসে ভুয়া ডেন্টিস্ট শাহিন।এসময় ভুয়া ডেন্টিস্ট শাহিন ও সন্ত্রাসী সোহেল সাংবাদিকদের উপর চরাও হয় এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করে প্রতারক শাহিন বলেন, এই এলাকায় তার মত আরো অনেক পল্লী চিকিৎসক বা মেডিকেল সহকারীরা তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার ব্যাবহার করছে,আমি করলে দোষের কি।আইন ফাইন দিয়ে কি হবে,রোগ ভালো হয়কিনা সেটা বড় কথা। ঐ সব আইন ফাইন দেখিয়ে লাভ নাই। যা পারেন করেন।
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন রওশন আরা জানান, এক কথায় এরা ভুয়া। সাধারণ রোগীদের প্রতারণা করে এমবিবিএস বা ডাক্তারদের পদবি ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। সরকারি নিয়মানুসারে এদের বিরুদ্ধে ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত জেল অথবা আর্থিক জরিমানাসহ উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যেতে পারে। গোপন সূত্রে জানাগেছে, ভুয়া ডন্টিস্ট শাহিনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু কুষ্টিয়া জেলা সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত যার বাহুবলে তিনি এ ধরণের অপরাধমূলক কাজ করে আসছেন।
এলাকা বাসীর অভিযোগ, এ সকল ভুয়া চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জনসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোন মনিটরিং। যে কারণে তারা প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। তাছাড়া এই সকল ভুয়া ডেন্টিস্টদের রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী পেটুয়া বাহিনী ও ক্ষমতাশীন দলের জনপ্রতিনিধিদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক । যাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে ভয় পায়। ভুক্তভোগী সাধারণ রোগীদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সকল ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।