কুড়িগ্রামে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় মাদ্রাসা কেন্দ্রে নকল সরবরাহ করেন শিক্ষকরা

মোঃ বুলবুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষা হচ্ছে। কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে জেলা সদরের ৩০ টি মাদ্রাসার পরীক্ষার্থীরা দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে এই কেন্দ্রের পরীক্ষায় ব্যাপকহারে নকলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেন্দ্র সচিব ও শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে পরীক্ষার্থীরা নকল নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রের পরীক্ষা কক্ষ ও শৌচাগারে গিয়ে নকলের কাগজ দেখা গেছে।

তবে এসব অভিযোগকে শ্রেফ প্রোপাগান্ডা বলে দাবি করেছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব মাওলানা মো. নূর বখত। কেন্দ্রের সুনাম নষ্ট হয় এমন প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই ওই কেন্দ্রে গিয়ে কয়েকটি কক্ষ ও শৌচাগারে নকলের টুকরা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
কেন্দ্র সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ওই মাদ্রাসা সহ কুড়িগ্রাম সদরের ৩০ টি মাদ্রাসার প্রায় ৯৩১ পরীক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এই কেন্দ্রের প্রায় প্রতিটি কক্ষে পরীক্ষার্থীরা নকলের সুবিধা নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাদ্রাসার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র ও কেন্দ্রের কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানায়, পরীক্ষার দিন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষককে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া না হলেও পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কয়েকটি মাদ্রাসার বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের কেন্দ্রে রাখা হয়। তারা ওই বিষয়ের বহু নির্বাচনি (নৈর্বেত্তিক) প্রশ্নপত্র সমাধান করে পরীক্ষা কক্ষে পৌঁছে দেন। শিক্ষকদের প্রহরায় শিক্ষার্থীরা তা দেখে দেখে উত্তরপত্র পূরণ করে। এছাড়াও লিখিত পরীক্ষায় বইয়ের পাতা ও ফটোকপি করা কাগজ নিয়ে পরীক্ষা দেয় শিক্ষার্থীরা। অনেক সময় এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে নকল পৌঁছে দেন দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা। পরীক্ষা চলাকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরাই পরীক্ষার্থীদের সতর্ক করেন। তখন পরিবেশ স্বাভাবিক থাকে।

মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অধ্যক্ষ মাওলানা মো. নূর বখতের ভাতিজা ও আলিয়া কামিল মাদ্রসার একজন শিক্ষক টাকার চুক্তিতে প্রতিবছর নকল সরবরাহের কাজ করছেন। এতে অধ্যক্ষ সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক জড়িত। কয়েক বছর আগে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট পরীক্ষার্থীদের নকল সরবরাহের অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষককে হাতেনাতে ধরেছিলেন। আর কখনও এমন অনৈতিক কাজ না করার শর্তে সেবার রক্ষা পেয়েছিলেন তারা। তবে এরপরও নকল সরবরাহ বন্ধ হয়নি। প্রতিবছর দাখিল পরীক্ষা সহ এই কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত যেকোনও ধরণের পরীক্ষায় হল চুক্তিসহ নানা অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা।

দাখিল পরীক্ষা চলাকালে আলিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্র পরিদর্শন করে আসা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই মাদ্রাসাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা ব্যাপক নকল করার সুযোগ পাচ্ছে। বাইরে থেকে কেউ গেলেই শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। শিক্ষকরা এমন অনৈতিক কাজে সহায়তা করলে ম্যাজিস্ট্রেট গিয়েও সহজে নকল ধরতে পারবেন না।
কেন্দ্র সচিব ও কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নূর বখত এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, এখন নকলের যুগ শেষ হয়ে গেছে। এমনিতেই মাদ্রাসা নিয়ে অনেকের নেতিবাচক ধারণা। সেসব ধারণা থেকে এমন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। আপনি চাইলে নিজে যেকোনও দিন কেন্দ্রে এসে দেখতে পারেন।

তার ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র সমাধানে সহায়তা করার অভিযোগ প্রসঙ্গে মাওলানা নূর বখত বলেন, এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। ট্যাগ অফিসার সহ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এছাড়াও ইউএনও ও এসিল্যান্ড স্যার কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। নকল করা কিংবা নকলে সহায়তা করার প্রশ্নই আসে না। যারা এসব বলছেন তারা মাদ্রাসা ও পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইছেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুসফিকুল আলম হালিম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসার সহ গোয়েন্দা সংস্থাকে অভিযোগ তদন্তের জন্য বলবো। এছাড়াও আগামীতে আমরা ওই কেন্দ্রে বিশেষ নজর দেবে।