কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেলপথে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে

এস কে রাজুু – কিশোরগন্জ প্রতিনিধিঃ ব্রিটিশ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রেলবিভাগের আওতায় ১৯১৭ সনে চালু হওয়া বাহাদুরাবাদঘাট হয়ে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব-চট্রগ্রাম রেলপথ। সেই সময়ে চট্রগ্রাম বন্দর থেকে যাত্রী পরিবহনসহ পণ্য পরিবহনে দেশের উত্তরাঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগ ছিল রেলপথ। এই রেলপথের ৯৯ কিলোমিটার রেলপথ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও আধুনিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ও অবহেলার শিকার হয়ে পড়ে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। বর্তমানে রেলপথটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে এ রেলপথে যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, এই রেলপথে মালবাহী ও তেলবাহী ওয়াগন ছাড়াই প্রতিদিন ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন চলাচল করে থাকে। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে চট্রগ্রামগ্রামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস, আবার চট্রগ্রাম থেকে বাহাদুরাবাদ এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ থেকে চট্রগ্রামী বিজয় এক্সপ্রেস, ঢাকা থেকে দু‘বার আন্তঃনগর এগারসিন্দুর, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী ঈশা খাঁ একপ্রেস আপ-ডইন, কিশোরগঞ্জ থেকে দু‘বার এগারসিন্দুর আন্তঃনগর এক্সপ্রেস, ঢাকাগামী কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস আপ-ডাউন প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। ময়মনসিংহ থেকে ভৈরব ২৪১ আপ-ডাউন, ময়মনসিংহ থেকে ২৪২ আপ-ডাউন ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ রেলপথে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ৯৯ কিলোমিটার রেলপথ কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলকিং (সিবিআই) পদ্ধতি না থাকার কারণে প্রতিটি রেলস্টেশনে ট্রেন চলাচলে মারাতœক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে দুইদিক থেকে দুইটি ট্রেন একই স্টেশন অতিক্রম (পাসিং) করার সময় বিলম্ব ও সময়ক্ষেপন হচ্ছে। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, নন ইন্টারলক পদ্ধতিতে এ রেলপথে ট্রেন চলাচল করায় ট্রেন স্ট্রপিংয়ে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। ব্রিটিশ আমলের তৈরি নন ইন্টারলক ও কম্পিউটার বেইজের বাইরে রেলপথে ট্রেন চলাচল সব-সময় ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে সিঙ্গেল দিতে সমস্যা ও বিলম্ব হচ্ছে। অন্যদিকে ভৈরব রেলজনশং থেকে শুরু করে ময়মনসিংহ রেলপথের গৌরিপুর স্টেশন পর্যন্ত ৯৯ কিলোমিটার রেলপথ এখনও কোন প্রকার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এই রেলপথে মোট ১১টি রেলস্টেশন রয়েছে। এই ৯৯ কিলোমিটার রেলপথ দীর্ঘদিন প্রয়োজনীয় মেরামত সংস্কার ও রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে ৯৯ কিলোমিটার অংশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে রেল লাইনে কংক্রিটের স্লিপারের স্থলে কাঠের স্লিপার। রেল লাইনে প্রয়োজনীয় পরিমান পাথর নেই। নেই প্রয়োজনীয় সিগনাল বাতি ও নিরাপত্তা। সরেজমিনে দেখা গেছে, এই রেলপথে ছোট বড় মিলিয়ে ৯টি রেলসেতু রয়েছে। এসব রেলসেতু মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে করে গত দেড় বছরে এই রেলপথে ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত, লাইন থেকে বগি পড়ে যাওয়াসহ ছোট ছোট ১৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ রেলপথে চলাচলকারি একাধিক ট্রেনের চালকরা জানান, রেললাইন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তারা ট্রেনের গতি বাড়াতে পারেন না। কারণ তারা ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। বাধ্য হয়ে তারা ভৈরবের পর এবং ময়মনসিংহের পর ওই রেলপথে ঢোকার সাথে সাথে ট্রেনের গতি কমিয়ে কম গতিতে ট্রেন চালিয়ে থাকেন। কারণ রেললাইনে প্রয়োজনীয় পাথর ও কাঠের তৈরি ও স্টিলের স্লিপারগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই রেললাইন জরাজীর্ণ থাকায় চালকরা গতি বাড়িয়ে ঝুঁকির মধ্যে ট্রেন চালনা থেকে বিরিত থাকছেন। তাই কোন ট্রেনই সময়সূচি অনুযায়ী গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না।কিশোরগঞ্জ স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ব্রিটিশ আমলের গুরুত্বপূর্ণ এই রেলপথটি অবহেলিত। কারণ গত দেড় দশকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রেলপথের আধুনিক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে এ রেলপথ মান্ধাত্মার আমলের এনালগ পদ্ধতির মধ্যেই পড়ে আছে। অভিজ্ঞ সিগন্যাল ম্যানদের কারণে বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যাত্রীরা রক্ষা পেয়েছে। তিনি দ্রুত এই রেলপথকে কম্পিউটার বেইজ ইন্টারলকিং পদ্ধতিতে স্থানান্তরের দাবি জানান।