মনোনয়ন বাণিজ্য: তদন্ত করবেন সভাপতি নিজেই

কাল আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা
মনোনয়ন বাণিজ্য: তদন্ত
করবেন সভাপতি নিজেই
বিশেষ প্রতিনিধি
আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যে খুনোখুনি, মারামারি হয়েছে তার সবই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফসল। এ পর্যন্ত ৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছে। এরা সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। এছাড়াও বারবার নির্দেশনা সত্ত্বেও বিদ্রোহ দমন করা যাচ্ছেনা। বিদ্রোহ শুধু দমনই করা যাচ্ছেনা, বিদ্রোহী প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৩১ টি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেননি। এরকম পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে তোলপাড় চলছে।
আগামীকাল ১৯ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতির সভাপতিত্বে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় এ বিষয়গুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে, এবার বিদ্রোহী প্রার্থীদের উত্থানের একটি বড় কারণ হল মনোনয়ন বাণিজ্য। যোগ্য, ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদেরকে মনোনয়ন না দিয়ে সুবিধাবাদী ও অযোগ্য লোকদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যার ফলে তৃণমূলে এক নীরব বিদ্রোহ হয়েছে। আর এই নীরব বিদ্রোহের কারণেই তৃণমূলের ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা অনেক ক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছে এবং তারা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। দুই দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তাদের একটি বড় অংশই আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে। আর এই প্রেক্ষিতেই মনোনয়ন বাণিজ্যের বিষয়টি সামনে এসেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের ঘটনা ঘটেছে এবং এ মনোনয়ন বাণিজ্যে তৃণমূলের নেতারা ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারাও জড়িত বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আর এই মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণেই এবার এত বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন যে, মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে দুইভাবে। প্রথমত, এমপিরা এবং তাদের পকেটস্থ নেতৃবৃন্দ অর্থের বিনিময়ে তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। আর এক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা বা দলে তার অবদানের বিষয়টি মূল্যায়ন করা হয়নি। শুধুমাত্র যারা মোটা অংকের অর্থ দিয়েছেন, তাদের নামই কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আবার কেন্দ্রেও কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এই বাস্তবতায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে যারা ত্যাগী ও পরীক্ষিত, দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছেন তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বারবার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে এ সম্পর্কে জানানোর পরও তারা এ ব্যাপারে কোনো প্রতিকার পাননি। আর এই প্রতিকার না পাওয়ার কারণে তারা বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছেন।
প্রথম দফার চেয়ে দ্বিতীয় দফায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা বেশি বিজয়ী হয়েছে এই কারণে যে তাদের অধিকাংশই ছিলেন এলাকায় জনপ্রিয় এবং দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করা। অন্যদিকে যারা মনোনয়ন পেয়েছে তারা হঠাৎ এসে রাজনীতিতে নামা এবং জনবিচ্ছিন্ন। আর এরকম মনোনয়ন বাণিজ্যের খবরটি আওয়ামী লীগ সভাপতির কানেও এসেছে। তিনি তার নিজস্ব একটি টিমের মাধ্যমে এই অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করছেন। আসলেই অর্থের বিনিময়ে অজনপ্রিয়, অপরিচিত এবং উড়ে আসা জুড়ে বসাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে কিনা এটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং মনোনয়নের ক্ষেত্রে এরকম যদি কোন ব্যত্যয় ঘটে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে একটি দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখতে পারেন বলেও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।