কার পকেটে ১৬৫ জন অতি দরিদ্রের টাকা

মমিনুল ইসলাম মমিন, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অতি দরিদ্রদের জন্য গৃহীত প্রকল্পের কাজ টাকা উঠানোর ৩মাস পর ভেকুতে সারলেন এক ইউপি সদস্য। এতে করে ১৬৫ জন অতি দরিদ্র উপকার ভোগী শ্রমিক বঞ্চিত হলেন ১৩ লাখ টাকার সুবিধা পাওয়া থেকে। জনমনে প্রশ্ন তাহলে এই ১৬৫ জনের টাকা কার পকেটে গেলো!

স‌রেজ‌মিনে ঘুরে জানা যায়, অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য গৃহীত ৯ প্রকল্পের ১ প্রকল্পেই ১৩ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠার পর তড়িঘড়ি করে মাত্র তিন দিনে বিকল্প উপায়ে ভেকুতে রাস্তায় মাটি ফেলেছে অভিযুক্ত মঠবাড়ী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ পারভেজ মিয়া।

এলাকাবাসী জানায়, তিন মাসেরও অধিক সময় আগে রাস্তায় কাজ দেখিয়ে টাকা উঠালেও আমরা এর কিছুই জানতাম না। পরে এলাকায় জানাজানি হলে দূর্নীতি ঢাকতে তড়িঘড়ি করে মেম্বার ভেকু মেশিনে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাক ও ট্রলিতে করে রাস্তায় ফেলে।

উপজেলার ইমরান, রাজিব, তোরাব সহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের রাস্তায় এতোজন শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে লুটপাট করে খাওয়ার জন্যই। এর চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার বেহাল দশা থাকলেও সেখানে প্রকল্প না দিয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বার এখানে প্রকল্প দিয়ে লুটপাটের চেষ্টা করেছে। ভুয়া ব্যক্তিকে উপকারভোগী সাজিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা হয়েছে।

আরও জানা যায়, ইউনিয়নের রায়মনি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চাঁন মিয়া মেম্বারের বাড়ি হইয়া তুরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার পূণঃনির্মান কাজের জন্য ১৬৫ জন শ্রমিক ৪০ দিন কাজ করার কথা থাকলেও তা ভেকু মেশিনে মাত্র ৩ দিনে শেষ করা হয়। এলাকাবাসী জানায় প্রায় ৩০০ মিটার রাস্তায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার বেশি মাটি কাটা হয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলতে ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ পারভেজ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সে অসুস্থ বলে ফোন কেটে দেয় এবং বেশ কিছুদিন ধরে তার ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার ফোন খোলা পাওয়া গেলেও এবিষয়ে তার বক্তব্য জানাতে সে বিভিন্ন তালবাহানার আশ্রয় নেয়।

৫নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আবুল বাশার বলেন, এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা ৪০ দিনের কর্মসূচিতে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতি করেছেন। আমি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের অনিয়ম দূর্নীতির বিচার চেয়ে বিভিন্ন দফতর সহ সাংবাদিকদের একটি খোলা চিঠি পাঠিয়েছি।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুছ মন্ডল এবিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, আপনারা কতদিন আগে গেছিলেন? এখন যান, গেলেই দেখতে পাবেন কাজ করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার সবুজ মিয়া বলেন, এখানে কর্মস্থলের শেষ মুহূর্তে আমাকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আমার আম্মা অসুস্থ থাকায় হয়তো কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শনে যেতে পারিনি। না দেখেই স্বাক্ষর করতে হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রকল্প গুলোতে কোনো অনিয়ম হয়নি। নিয়ম মেনেই কাজ করা হয়েছে। যদি কোথাও কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, এখানে মাত্র কয়েকদিন হলো আমি যোগদান করেছি। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।