কলাপাড়ায় কোচিংবানিজ্য শিক্ষকের কর্মকান্ড এখন অনৈতিক ও অকান্ডে পরিনত হয়েছে

রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি ঃ খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোচিংবাজ বিএসসি শিক্ষক মো: দেলোয়ার হোসেন সপ্তম শ্রেনীর মেধাবী শিক্ষার্থী আদিবাকে শাসিয়ে বললেন – ’তুই পঞ্চাঁশ বার কান ধরে ওঠ বস কর। বেয়াদব মেয়ে, আমার ক্লাশ থেকে তুই বেরিয়ে যা’- এভাবে আদিবার পূর্বে একই শ্রেনীর শিক্ষার্থী ফাতিহা আক্তার জান্নাতি, জুলিয়া ফেরদৌসি তানহা, সৈয়দা মেরুনা, আনিকা তাবাসসুম নোভা, জোবায়দা জেসি, আয়শা সহ বেশ ক’জনকে হোম ওয়ার্ক’র মত তুচ্ছ অজুহাতে পঞ্চাঁশ বার কান ধরে ওঠ বস করান এ দুর্নীতিবাজ দেলোয়ার হোসেন। এর মধ্যে জুলিয়া ফেরদৌসি তানহা কান অপারেশনের রোগী হলেও ছাড় দেয়া হয়নি তাকেও। আর আদিবা বিনা কারনে পঞ্চাঁশ বার কান ধরে ওঠ বস করতে রাজী না হওয়ায় তাকে বেয়াদব বলে শাশিয়ে ওঠেন দেলোয়ার। তিঁনি শ্রেনী শিক্ষক বলে পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেয়ার হুমকীও দেন।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, ১৫মার্চ ২০২০ রবিবার খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ’ক’ শাখার পঞ্চম পিরিয়ডে অংক শ্রেনী শিক্ষক মো: দেলোয়ার হোসেন তাঁর কাছে প্রাইভেট না পড়ার দরুন হোম ওয়ার্ক’র তুচ্ছ অজুহাত সৃষ্টি করে কয়েক মেধাবী শিক্ষার্থীকে ৫০ বার কান ধরে ওঠ বস করিয়ে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করেন। এসময় শিক্ষার্থী জুলিয়া ফেরদৌসি তানহা কান অপারেশনের রোগী বলার পর তাকেও কান ধরে ওঠ-বস করতে বাধ্য করেন দেলোয়ার। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ হোমওয়ার্ক তিঁনি কোন দিনও দেখেননি । এমনকি তাঁর নিয়মে অংক না করলে পরীক্ষার খাতায় কোন নম্বর না দেয়ার হুশিয়ারী দেন শিক্ষার্থীদের। এভাবে ঐ শিক্ষক প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তাঁর তত্ত¡াবধানে হোমপ্রাইভেট ও কোচিংয়ে যেতে বাধ্য করেন। এতে যারা যেতে রাজী না হয় তাদের শ্রেনীকক্ষে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন, পরীক্ষার হলে হয়রানী ও উত্তর পত্রে নম্বর কমিয়ে দেন । অভিযোগ আছে শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন (ইনডেক্স নং-২১৯৮১৫) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় ৭ম থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত সকল ক্লাশে অংক ও বিজ্ঞান বিষয়ের শ্রেনী শিক্ষক, অথচ এ প্রতিষ্ঠানে একাধিক বিএসসি শিক্ষক থাকার পরও শিক্ষক দেলেয়ারকে প্রধান শিক্ষক ক্লাস রুটিনে বিজ্ঞান ও অংক বিষয় পড়াতে দেন। এমনকি অষ্টম শ্রেনীর শারিরীক শিক্ষা ও দশম শ্রেনীর বোর্ড পরীক্ষার সকল প্রাকটিক্যাল মার্কসের মালিকও অবৈধভাবে দেলোয়ারকে বানিয়ে দেন। এ নিয়ে অন্য শিক্ষকরা মুখ খুললে তাঁদের হয়রানী করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শত শত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের অভিযোগ ছাত্র-ছাত্রীদের জিম্মি করে উপার্জিত এসব অর্থের একটি অংশ পেয়ে থাকেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। অবৈধ উপার্জনে এ টাকায় দু’জনেরই শহরে বাড়ী নির্মানের প্লট ও ব্যাংক ব্যালেন্সে ভরপুর। জনমনে কথিত আছে এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারী হওয়ার পরও প্রধান শিক্ষকের যাতে পদায়ন না হয় সেজন্য প্রতিনিয়ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট কত্রপক্ষের কাছে তদ্বির বানিজ্য করছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আদিবা’র অভিভাবক মোসা: সুফিয়া আক্তার বলেন, রবিবার অংক শ্রেনী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন তুচ্ছ কারনে আমার মেয়ে আদিবাকে ৫০ বার কান ধরে ওঠ বস করতে বলেন। এতে সে রাজী না হওয়ায় তার সাথে অকথ্য ও জঘন্য ব্যবহার করেন। আদিবাকে বেয়াদব এবং শ্রেনী কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। সোমবার শ্রেনী কক্ষে মেয়ের সাথে ঐ শিক্ষক কথা বলেননি। এমনকি মেয়ে তার কাছে অংকের খাতা নিয়ে গেলে তিনি কোন ভ্রæক্ষেপই করেননি। তিনি আরও বলেন, অংক শ্রেনী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন এর আগে আমার বাসায় এসে আমার মেয়ে আদিবাকে তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য বলেন। রাজী না হওয়ার পর থেকেই তিনি শ্রেনী কক্ষে আমার মেয়ের উপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। আরেক শিক্ষার্থী জুলিয়া ফেরদৌসি তানহা’র মা মোসা: রাবেয়া বশরি ও শিক্ষার্থী ফাতিহা আক্তার জান্নাতি’র মা মোসা: নাসরিন এর একই অভিযোগ। তাঁরা কোচিংবাজ শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন’র রোষানল থেকে কোমলমতি শিশুদের বাঁচাতে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ইউএনও’র কাছে দু’এক দিনের মধ্যে লিখিত আবেদন করবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক মো: দেলোয়ার হোসেন’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিঁনি উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আ: রহিম বলেন, তিঁনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। কোন অভিভাবক তাঁকে এ বিষয়ে অভিযোগ করেনি।

খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কলাপাড়া ইউএনও মো: মুনিবুর রহমান বলেন, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যথাযথ কত্র্পক্ষের কাছে প্রেরন করা হবে নিয়মঅনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা ও উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও কলাপাড়ায় এক শ্রেনীর কোচিংবাজ শিক্ষক প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তাঁদের পরিচালিত কোচিং বানিজ্যে পড়তে যেতে বাধ্য করছেন। এরা বাসা-বাড়ী এমনকি শহরের অলি-গলিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রাইভেট কিংবা কোচিংবানিজ্য করে বৎসরে অধৈ উপায়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ইতোপূর্বে গনমাধ্যমে কোচিংবানিজ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসন বেশ কয়েকজন শিক্ষককে ভ্রাম্যমান আদালতে দন্ড প্রদান সহ কোচিংবাজ শিক্ষকদের হুঁশিয়ার করেন। এমনকি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কোচিংবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নামের তালিকাও প্রেরন করা হয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে। কিন্তু ক’দিন বন্ধ থাকার পর কোচিংবাজ শিক্ষকরা আবারও বিভিন্নভাবে নতুন নতুন কৌশলে বেপরোয়া হয়ে উঠতে শুরু করেছেন।