কচ্ছপিয়ায় রাবার ড্যাম ফুটো হয়ে সরে গেছে পানি,দুই হাজার কৃষকের চাষাবাদ অনিশ্চিত

মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু, বান্দরবান
নাইক্ষ্যংছড়ির পার্শ্ববর্তী রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের এক মাত্র রাবার ড্যামটি ফুটো হয়ে পানি সরে গেছে। এ করণে বিপাকে ওই এলাকার কৃষক। স্থানীয় কৃষক আবুল কালামসহ অনেকে জানান গত ২৭ ডিসেম্বর রাত থেকে সামান্য সামান্য পানি সরতে থাকে। ২৮ ডিসেম্বর সকাল থেকে এটি সম্পন্ন ফেটে গিয়ে পানি সরে নিচের দিকে চলে য়ায়। এই বোরো মৌসুম শুরুর ঠিক আগ মুহুর্তে রাবার ড্যামটি ফুটো হয়ে পানি নেমে যাওয়ায় এসব এলাকার অন্তত ২ হাজার কৃষকের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কচ্ছপিয়ায় রাবার ড্যাম ফুটো হয়ে সরে গেছে পানি,দুই হাজার কৃষকের চাষাবাদ অনিশ্চিত

ফলে পানির স্তর আশংকাজনক পরিমান নিচে নেমে যাওয়ায় এই রাবার ড্যাম এর অধীনে আর কৃষির আবাদ করা যাবে না আশংকা করেছেন ড্যাম এর অধীনে থাকা ২ হাজারের অধিক কৃষক । তারা মনে করেন, এই মূহুর্তে ড্যাম সেলাই বা নতুন ড্যাম বসিয়ে পূনরায় পানি উত্তোলন আদৌ সম্ভব হবে না।
তাই বিপাকে পড়েছে এসব কৃষক। তারা মনে করেন,এসব কারসাজি ব্যবস্থাপনা কমিটির।
স্থানীয় ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার যথাক্রমে জাকের আহমদ ও মোহাম্মদ ইউনুছ জানান,এই রাবার ড্যাম কচ্ছপিয়ার কৃষকের প্রাণ। এটির রাবার ফেটে গিয়ে ২ দিন ধরে পানি নিচে নেমে যাওয়ায় পানির স্তর আর নেই। এখন কৃষকদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। ২ হাজারের অধিক কৃষক বিপাকে পড়েছে এ কারণে।

তারা আরো জানান,এ রাবার ড্যাম ফেটে যাওয়ার অনেক কারণ আছে।তন্মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি না থাকা অন্যতম। দ্বিতীয়ত বালুদস্যুদের কাল ছিলো এটি। এভাবে নানা কারণে এটি দ্বিতীয়বার ফেটে গিয়ে এ দূর্দশার কবলে পড়ে। এর আগে আরেকবার ফেটে গিয়েছিলো। সেটির সেলাইকৃত অংশ কিন্ত এবার ফাটে নি এখনও। রহস্য কী বের হবে ভালো করে তদন্ত করলে।


স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ তৈয়ব বলেন,এখন সেলাই করলেও ততবেশী কাজ হবে না।
হয়তো বা একতৃতীয়াংশ কৃষক তাদের ধান চাষ আবাদ করতে পারবে। তিনি আরো জানান,এ ড্যাম ফেটে যাওয়ার কারণ বের করা দরকার। কেননা কারণ অনেক। তন্মধ্যে বালুদস্যুদের বদনজর একটি। হয়তো কৃষির চাইতে কোটি টাকার বালুই তাদের কাছে বেশী প্রয়োজন ছিলো।

এ ছাড়া এ রাবার ড্যাম রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে কেন তারা দেখে নি। সুতারাং তদারকীর অভাব,ব্যক্তিকর্তৃক এককভাবে পরিচালনার কারণে রাবার ড্যামের এ অবস্থা হলো। এটির কারণে কারো শত্রু হলেও করার কিছুই তিনি দেখতে পারছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষক জানান,বড়জাংছড়ি রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি জহির উদ্দিন একজন বালুদস্যু।

ড্যামটি তার হাতে যাওয়ার পর থেকে নানা অনিয়ম-দূর্নীতি চলে আসছিলো। এখানে কোন কমিটি, সমিতি নেই বললে চলে। রক্ষণাবেক্ষণ বলতে কিছুই নেই এ রাবার ড্যামে। আর ড্যামের উজান থেকে বড়বড় কাঠ নিয়ে এসে ড্যামের উপর দিয়ে খালের নিচের অংশে পারাপার করা হয় রাতের আঁধারে। এ ছাড়া অদক্ষ পরিচালনা আর উপজেলা কেন্দ্রিক দায়িত্বরত সরকারী টেকঅফিসাররা জহিরের সাথে আঁতাতের কারণে তদারকি কমিয়ে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্ট হয়।

তারা আরো জানান,এ ব্যবস্থাপনা কমিটি কৃষকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করলেও দীর্ঘ দিন ধরে কোন হিসেব নিকেশ দেয় না তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে। এলাকার মানুষের দাবী সুন্দর ও স্বচ্ছল মানুদের নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে পরিচালনার দাবী জানান।

স্থানীয় আরো একটি সূত্রে জানা গেছে যে কোনভাবে পানি কমে গেলে রাবার ড্যামের উপরের অংশ থেকে বালু উত্তোলন সহজ হবে। হয়তো বালু দস্যুদের কেউ এ রাবারটি ফুটো করে দিতে পারে। যেন পানি কমে গেলে এ কাজ করতে পারে।

কচ্ছপিয়ায় রাবার ড্যাম ফুটো হয়ে সরে গেছে পানি,দুই হাজার কৃষকের চাষাবাদ অনিশ্চিত

অপর একদল কৃষক জানান,সমিতি সরকারী, মিটিং নেই,হিসেব নেই,তদারকী নেই, কিছুই নেই। রাবার ড্যামে পানি ওভারফ্লু হলে পানি খরচ ১ থেকে দেড় হাজার টাকা আর পানি কমে গিয়ে ওয়াটার পাম্প বা পানির মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করলে পানি খরচ নিতে পারবে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। এ কারণে রাবার ড্যামের এ করুন দশা হলো। এ বিষয়ে এ সমিতির সভাপতি জহির উদ্দিন বলেন,রাবার ড্যামের রাবারের জোড়ায় জোড়ায় ফেটে গেছে। তাছাড়া রাবারের মেয়াদও নেই তাই করার কিছুই নেই।

তবে তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন এসবই ষড়যন্ত্র। জিও ব্যাগ দিয়ে আজকালের মধ্যে পানি বন্ধ হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য,এ রাবার ড্যামের অধিনে চাষ হয় ৬টি বিল এলাকাজুড়ে ধানচাষ । এখানে সমিতির সদস্য সংখ্যা রয়েছে ৯৯১ জন। কৃষক রয়েছে ২ হাজারের অধিক। অনেকে বলেছেন আড়াই হাজার। এটি জেলার সর্ববৃহৎ রাবার ড্যাম। যেটির অবস্থান ককসবাজার জেলার রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বড়জামছড়ি খালের মৌলভীরকাটা এলাকায় । যা গত দেড় দশক আগে নির্মাণ করা হয়।