ওয়াজ মাহফিলে আপত্তিকর বক্তব্য দিলে প্রতিহতের আহ্বান ছাত্রলীগের

দেশের যেকোনো জায়গায় ওয়াজ মাহফিলে বাংলাদেশ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়া বক্তাদের প্রতিহত করতে সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান।

কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অবমাননার প্রতিবাদে এবং জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আল নাহিয়ান খান এ আহ্বান জানান। রবিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই সমাবেশ হয় সমাবেশের আগে মধুর ক্যানটিন থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রলীগ।

সমাবেশে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সংগঠনের সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ‘কোথাও ওয়াজ মাহফিলের খবর পেলে আগে থেকেই আপনারা সেখানে গিয়ে অবস্থান নেবেন। ওয়াজ মাহফিলে “পাকিস্তানপন্থী ও রাজাকারদের দোসর”কোনো বক্তা বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে কথা বললে দাঁতভাঙা জবাব দেবেন। তাদের সেখানেই প্রতিহত করবেন। কেউ কিছু বলে না বলে ওদের সাহস বেড়ে গেছে।’

হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর উদ্দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা মুরব্বি মানুষ, আপনাদের সম্মান করি। কিন্তু শ্রদ্ধার জায়গায় আপনারা আঘাত হেনেছেন। জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার পেছনে আপনাদের প্রত্যক্ষ মদদ আছে। আপনারা জঙ্গিবাদকে উসকে দিচ্ছেন।’

ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে পাকিস্তানপন্থী উগ্রবাদী ধর্ম ব্যবসায়ীরা দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তারা কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর আঘাত করেছে। সিসিটিভি ফুটেজে দুই কুলাঙ্গারকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অবমাননা করতে দেখা গেছে। যিনি বাংলাদেশের মানচিত্র আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, সেই জাতির পিতার ভাস্কর্যে তারা আঘাত হেনেছে। তারা বারবার বুঝিয়েছে যে তারা সেই পেয়ারে পাকিস্তানের পথেই চলছে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সমাবেশ সঞ্চালনা করেন। এতে আরো বক্তব্য দেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান। মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ। এই কর্মসূচিতে সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন।

সমাবেশে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘আপনারা কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা দেবেন না। শক্তি থাকলে ঘোষণা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসুন, আপনাদের শক্তি আমরা দেখব। আপনারা আমাদের কলিজায় আঘাত দিয়েছেন। আপনারা ইসলাম ধর্মের লোক নন, দেশের শত্রু ও রাজাকারদের বংশধর। আপনাদের ভেতরে ইসলাম নেই, আছে দেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। আমরা বাঙালি-বাংলাদেশী। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আর কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হলে পিঠের চামড়া তুলে নেব। একজনকে ছাড়া হবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন মাদ্রাসা এবং কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধার পার্থক্য তুলে ধরে বলেন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে, সেখানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। আজকে শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি সুস্পষ্ট বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

মোল্লারা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহার করছে অভিযোগ করে সাদ্দাম আরো বলেন, আমাদের আহবান থাকবে এদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারের কাছেও আহবান থাকবে, জাতির পিতা আমাদেরকে যে শিক্ষা আদর্শ উপহার দিয়েছেন- বিভাজিত শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে বিজ্ঞান সম্মত কর্মমুখি শিক্ষা ব্যবস্থা সেটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। করো অসহায়ত্বকে পূঁজি করে কেউ যেন তাদেরকে রাজনৈতিক শ্রমিকে পরিণত করতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে।